বহুদিন ধরেই ভীতি ছড়িয়ে আসছিলো ভয়ঙ্কর ইকরা

স্টাফ রিপোর্টার: দিবালোকে প্রকাশ্যে সাবালক তিন সন্তানকে মেরে তাড়িয়ে তাদের বৃদ্ধ পিতাকে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনা চাওর হতেই ইকরামুল হক ইকরাসহ তার লোকজনের খুঁটির জোর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যে ইকরা দীর্ঘদিন ধরে একের পর এক মানুষকে মেরেছে, তুলে নিয়ে তালপুকুপাড়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে সেই ইকরা কেন এতোদিন গ্রেফতার হয়নি? তা নিয়েও আলোচনার অন্ত নেই।
কে এই ইকরামুল হক ইকরা? নিজেকে যুবদল নেতা বলে দাবি করে। গ্রামের রাস্তায় পোস্টারও আছে। গ্রামে ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে মাঝে মাঝেই মহড়া দেয়। একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে চলা ইকরামুলের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা বাড়লেও পুলিশ তাকে ধরে না। উল্লেখ্য, গ্রামে পুলিশের সাথে ঘুরতেও দেখা যেতো মাঝে মাঝে। এ কারণে গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারনা জন্মায় প্রভাবশালী ইকরা যা ইচ্ছে তাই করলেও পুলিশ ওকে কিছু বলবে না। ফলে অনেকেই নীরবে নির্যাতন নিপীড়ন মুখ বুজেই মেনে নিতে শুরু করে। এতে ইকরার অত্যাচার বাড়তেই থাকে। কিছুদিন আগে গ্রামেরই দেলোয়ার হোসেনকে তুলে নিয়ে তালপুকুরপাড়ে নিয়ে রাতভর নির্যাতন করে। সকালে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে দেলোয়ারকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে এখনও ঠিক মতো হাঁটতে পারেন না। মামলা করা হলেও ইকরা প্রকাশ্যেই ঘুরতে থাকে। কয়েকদিন আগে নাসিরকে মেরে আহত করে। পুলিশে নালিশ করে প্রতিকার না পেয়ে আদালতে মামলা করেও ইকরামুলসহ তার লোকজনের কিছু হয় না বলেই ধারনা জন্মাতে থাকে গ্রামের সাধারণ মানুষের। এরই একপর্যায়ে গতপরশু শনিবার প্রকাশ্যে রশি দিয়ে বেঁধে ইকরামুল তারই নিকটাত্মীয় হাবলুর বাড়িতে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করে আশরাফ উদ্দীনকে। তার ছেলে-মেয়ে পিতাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাদেরও মেরে তাড়ানো হয়। এরা গ্রামবাসীর সহযোগিতা চাইলেও কেউ সাহস করে এগিয়ে যায়নি। উল্টো অনেকেই আতঙ্কের মাত্রা ছড়িয়ে বলতে শুরু করে, ওদের বিরুদ্ধে মামলা করেও যখন কিছু হয় না। যে ইকরা প্রকাশ্যেই বলে টাকা দিয়ে পুলিশ কেনা, পুলিশের এক অফিসারকে যার সাথে মাঝে মাঝেই গ্রামে ঘুরতে দেখা যায় তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে কে?
ইকরামুল হক ইকরা যুবদলের নেতা। অথচ ঘোরে ক্ষমতাসীন দলের কোনো কোনো নেতার সাথে। কখনো পুলিশের সোর্স সাজে, কখনো সাজে গডফাদার। প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়া ওর নিয়মিত কাজ হয়ে দাঁড়ায়। জাফরপুর মোড়ের বাড়িতে বসবাস করলেও গাড়াবাড়িয়া গ্রামের আতঙ্ক ছড়ানোর হেতু জানতে গেলে গতকাল গ্রামের অনেকেই নিজেদের পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ছাগলা বিলের অর্ধেক ওদের দখল করা। অনেকেরই জমি বিভিন্নভাবে ওর পূর্বপুরুষের দখলে নেয়া। এ নিয়ে গ্রামের অনেকের সাথেই মামলা চলছে। জমিজমা নিয়ে বিরোধের মাত্রা যতোই বেড়েছে, ইকরামুল হক ইকরা ততোই হিং¯্র হয়ে ওঠে আতঙ্কগ্রস্থ করে তুলেছে। একের পর এক অপরাধমূলক ঘটনা ঘটানোর মধ্যদিয়ে ভয়ানক ত্রাসে রূপান্তর হচ্ছে তা বুঝেও গ্রামের তেমন কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। প্রকাশ্যে খুনের পরও ইকরামুলসহ তার লোকজরেন যে কিছু হবে তা বিশ্বাস করতে নারাজ গ্রামের অনেকে। ফলে দীর্ঘশ্বাসই যেন গ্রামবাসীর অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইকরামুল হক ইকরা তার পিতার প্রথমপক্ষের ছোট ছেলে। বড় ভাই হাজি রবিউল হক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার। মেজ ভাই মজিবুল হক মন্টু চুয়াডাঙ্গা এমএ বারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। ঝন্টু কয়েক বছর বিদেশে থাকলেও বর্তমানে বাড়ি ফিরে চাষাবাদ করেন। ছোট ছেলে ইকরা রাজনীতি করে। জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য গত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নামমাত্র ভোট পেয়ে পরাজয় বরণ করতে হয় তাকে। আশরাফ উদ্দীন খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত ইকরামুল হক ইকরাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষ বলেছে, পুলিশ ওর সম্পর্কে একটু ভালোভাবে খোঁজখবর নিলে জানতে পারবে কতোটা খারাপ না হলে অতোটা খারাপ কাজ করা যায়। পুলিশ আন্তরিক হলে ইকরামুলের বিরুদ্ধে অনেকেই মুখ খুলতে সাহস পাবে বলেও অভিমত অনেকের।