স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচারের জন্য প্রস্তুত দুর্নীতির আরও তিন মামলা। গ্যাটকো, নাইকো ও বড় পুকুড়িয়া কয়লাখনি মামলাগুলো অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য রয়েছে। অভিযোগ গঠনের পরেই শুরু হবে এসব মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ। ইতোমধ্যে দুর্নীতির এক মামলা রায় ঘোষণার জন্য রাখা হয়েছে। আরেকটি মামলা রয়েছে বিচারের শেষ পর্যায়ে। ফলে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ৫টি দুর্নীতির মামলার মধ্যে চলতি বছরেই ঘোষিত হচ্ছে দুর্নীতির অভিযোগে দায়েরকৃত দুই মামলার রায়। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য রাখা হয়েছে। আর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য রয়েছে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলেই মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করবে আদালত।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের একাধিক আইনজীবী জানিয়েছেন, ৫টি দুর্নীতির মামলা ছাড়াও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও ৩২টি মামলা রয়েছে। হত্যা, নাশকতা, পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধাদান, গাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে এসব মামলা করা হয়েছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, দারুসসসালাম ও কুমিল্লায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা এসব নাশকতার মামলায় ইতোমধ্যে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। এছাড়া রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে একটি ও মানহানির অভিযোগে কয়েকটি মামলা নিম্ন আদালতে দায়ের করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এম মাহবুবউদ্দিন খোকন জানান, চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার মধ্যে ১৩টির বিচার কার্যক্রম হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত রয়েছে। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করেছিলো। কিন্তু আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছে। এদিকে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবীরা জানিয়েছেন, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল দায়ের করেছে।
খালেদা জিয়াসহ তার সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় নাইকো, গ্যাটকো ও বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতির মামলা। দীর্ঘদিন এসব মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিত ছিলো। কিন্তু হাইকোর্ট মামলা বাতিল চেয়ে খালেদা জিয়ার আবেদন খারিজ করে রায় দেয়। ওই রায়ের পরই নিম্ন আদালতে এসব মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপরই ঢাকার বিশেষ জজ আদালত তিনটি মামলা অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন। এর মধ্যে বড়পুকুড়িয়া কয়লা খনি মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ১৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য রয়েছে। ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে এই কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়, চীনা প্রতিষ্ঠান কনসোর্টিয়াম অফ চায়না ন্যাশনাল মেশিনারিজ ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্স্রপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির উত্পাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করার মধ্য দিয়ে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতি করেছেন।
এদিকে নাইকো মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ৪ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছে আদালত। ওইদিন খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় দায়ের করা এ মামলায় কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া গ্যাটকো দুর্নীতি মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বরে এ মামলা করে দুদক। মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্যাটকোকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতিসাধন করেছেন আসামিরা।