ইবির উপাচার্যের ওপরে হামলার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ : মামলা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী দুর্বিত্তদের হামলার শিকার হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ভোর পৌনে ৪টার দিকে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের গাড়াগঞ্জ এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। পরে ভোর পৌনে ৫টার দিকে স্থানীয় ও ইবি থানা পুলিশের সহায়তায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। এসময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বলেন, গত বৃহস্পতিবার ব্যক্তিগত কাজে উপাচার্যের গাড়ি নিয়ে ঢাকা যাই। কাজ শেষে রাত ১০টায় আমি ঢাকা থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে রওনা হই। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি পার হয়ে গোয়ালন্দ মোড়ে আমি গতিপথ পরিবর্তন করি। রাজবাড়ি-কুষ্টিয়া মহাসড়ক না হয়ে ঢাকা-মাগুরা মহাসড়ক হয়ে ঝিনাইদহ আসি। ঝিনাইদহে আমার ব্যক্তিগত সহকারী রেজাউলকে তার বাসার কাছাকাছি নামিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে রওনা হই। ঘটনার সময় রাত সাড়ে ৩টার দিকে আমার গাড়িটি কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের গাড়াগঞ্জ পার হওয়ার পর দূর থেকে দেখলাম দুটি ট্রাক রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। আরও একটু এগিয়ে দেখি রাস্তায় আড়াআড়িভাবে গাছ পরে আছে। পরিস্থিতি খারাপ দেখে গাড়ির চালক ভিআইপি (পুলিশের গাড়ির হর্ন) হর্ন বাজাতে থাকে। ওই সময় আমার গাড়ির পেছনে আরও ৫টি ট্রাক চলে আসায় পেছন দিকেও ফিরে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এসময় ৩জন মুখোশধারী হাতের রামদা দিয়ে চালকের গ্লাসের দিকে আঘাত করে। সাথে তারা পেছনের গ্লাসেও কোপ দিলে গ্লাস ভেঙে যায়। এসময় চালক ফরহাদ গাড়ির গিয়ার বাড়িয়ে গাছের ওপর দিয়েই যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু গাছটি মোটা থাকায় তা আর সম্ভব না হওয়ায় চালক আমাকে বললো স্যার গাড়ি থেকে নেমে পালান। তখন আমি গাড়ির ডানদিকের দরজা খুলে পালিয়ে পাশের জঙ্গলে আশ্রয় নিই। আর চালক ফরহাদ বামদিকে নেমে যায়। এসময় দুর্বিত্তরা টর্চ দিয়ে খুঁজে আমাকে আবার গাড়ির কাছে নিয়ে আসে। এ সময়টাতে আমার মনে হলো ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। গাড়ির কাছে এসে তারা আমাকে টাকা দিতে বলে। আমার কাছে টাকা না থাকায় ওদের ল্যাপটপটা নিয়ে যেতে বলি। তখন দুর্বিত্তরা ল্যাপটপ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আমাকে একদম নড়বি না-বলে গাড়ির পেছনের দিকে যায়। এ সুযোগে আমি ঝুঁকি নিয়ে সোজা সামনের দিকে দৌঁড়াতে থাকি। প্রায় দেড় মিনিট দৌঁড়ে এক বৃদ্ধার বাড়িতে আশ্রয় নিই। পরে আমি বৃদ্ধার কাছে পরিচয় দিলে তিনি আমাকে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাচ্চু নামে এক কর্মচারীর বাসায় নিয়ে যান। পরে বাচ্চুর বাসায় গিয়ে ওর মোবাইলফোন থেকে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানকে জানায়। পরে প্রক্টর ইবি থানায় যোগাযোগ করে পুলিশের সহায়তায় ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি।
গাড়ি চালক ফরহাদ বলেন, দুর্বিত্তদের হাতে থাকা রামদা দিয়ে গাড়িতে কোপ দিলে আমি প্রতিবাদ জানাই। এতে তারা আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরে পরিস্থিতি খারাপ দেখে স্যারকে পালাতে বলি। পরবর্তীতে স্যারের ফোন বন্ধ পেয়ে ভেবেছিলাম স্যার বুঝি আর নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, এ ঘটনা শোনার সাথে সাথে আমি কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সহায়তায় উপাচার্য মহোদয়কে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসি। ইতঃমধ্যে দুই জেলার পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এদিকে এঘটনার প্রতিবাদ দুপুরে জানিয়ে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। এসময় তারা অবিলম্বে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান। শৈলকূপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন জানান, উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারীর ওপর হামলার ঘটনায় শৈলকূপা থানায় মামলা দায়ের করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।