জনসংখ্যা জনশক্তি হলেও আমাদের বাস্তবতা ভিন্ন

দেশে চক্রবৃদ্ধিহারে জনসংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে কার্মসংস্থানের চাহিদাও। দেশে কর্মসংস্থানের জোগান না থাকার কারণেই মূলত শ্রম বিকোতে পরদেশে পাড়ি জমানোর সংখ্যাও বেড়েছে। এটা দোষের কিছু নয়, বরঞ্চ বিদেশি মুদ্রা অর্জন আমাদের স্বনির্ভরতার পথকে সুগম করছে। যদিও বিদেশে বিনিয়োগকৃত জনশক্তি অনুপাতে আমাদের আয় অনেকটাই কম। কারণ, দক্ষতা অর্জন ছাড়াই বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রবণতা। অবশ্য এ প্রবণতার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণশালা গড়ে তুলতে না পারাটাও কম দায়ী নয়। যদিও দায় এড়ানোর অজুহাতের অভাব নেই।
বিদেশে পাড়ি জমিয়ে বছর ঘুরতে না ঘুরতে লাশ হয়ে বাড়ি ফেরার কোনো খবর মানে বিদেশে গেলেই নিশ্চিত মৃত্যু নয়। কাজে বের হয়ে দেশেও কি মানুষ মারা যাচ্ছে না? দেশ-বিদেশের কোনোখানেই যখন স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা নেই তখন মৃত্যুভয়ে ঘরকুনো হওয়া মানে নিজেকে পেছনে ফেলা। ভয় না পাওয়ার চেয়ে ভয়কে জয় করাই বীরপুরুষের কাজ। তাই বলে নিশ্চিত পতনে ঝাঁপিয়ে পড়াটা বোকামি। আমাদের দেশে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা জাতিসুদ্ধ পতনের দিকে ধাবিত হওয়া বা ঝাঁপিয়ে পড়া বললে বোধকরি খুব একটা ভুল বলা হয় না। বিশ্বে এমন কিছু দেশ রয়েছে যেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য অধিবাসীদের পাশাপাশি অভিবাসীর বসবাসের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হয়। ভারত উপমহাদেশে? জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার চক্রবৃদ্ধিকেও হার মানিয়ে সর্বত্রই যেন মাছি থকথকে ভিড়। মুক্তির পথ খুঁজতে যে যার মতো বিদেশে পাড়ি জমানোর পথ খুঁজছে। দক্ষতা অর্জনের গুরুত্ব উপলব্ধি করছে তখন যখন, বিদেশে কাজের ক্ষেত্রে অবমূল্যায়নের বিষয়টি বুঝতে পারছে। অদক্ষ শ্রমিকের ভাবমূর্তি ধূলণ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে আমাদের পরিচয়েও কি তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে না?
অবশ্যই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ প্রয়োজন। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে পারলেই জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যত আশা করা সম্ভব। অন্যথায় অবান্তর। দেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে জন্মনিয়ন্ত্রণে নানামুখী কর্মসূচি ছিলো। ওই কর্মসূচি কিছুটা থাকলেও তা সীমিত। ‘দুটির বেশি সন্তান নয়, একটি হলে ভালো হয়’ স্লোগানে আর কতোটুকুই বা জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্ভব? জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই যে ভয়াবহ পরিস্থিতি ফুটে উঠেছে। করুণ পরিণতির আগেই আমাদের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ দরকার।