চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডারদের অবস্থান ধর্মঘট

স্টাফ রিপোর্টার: চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে গতকাল শনিবার কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি) অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। এরই অংশ হিসেবে চুয়াডাঙ্গা জেলার চার উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মচারীরাও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
গতকাল শনিবার সকালে সাড়ে ৯টায় বাংলাদেশ স্বাস্থ্য বিভাগীয় সিএইচসিপি চুয়াডাঙ্গা উপজেলা অ্যাসোসিয়েশন সদর উপজেলা শাখার উদ্যোগে কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মচারীরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন। এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৬জন কর্মী। কর্মসূচি আজ ও আগামীকালও চলবে বলে জানানো হয়। কর্মসূচি শেষে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। (২পৃষ্ঠার ৩কলামে দেখুন)

দর্শনা অফিস ও দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সারাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচপিদের চাকরী জাতীয় করণের দাবিতে আন্দোলনে মাঠে নেমেছে। কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক ঘোষিত ১০ দিনের আন্দোলন কর্মসূচি শুরু হয়েছে গত ১৮ জানুয়ারি। ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে অবস্থান কর্মসূচি চলবে। ২৪ থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালন করবে অধিকার বঞ্চিত এ কর্মকর্তারা। নিজেদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে গতকাল শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উপজেলার ২৮ জন সিএইচসিপি উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. আবুহেনা জামালের কাছে অবহতিকরণপত্র পেশ করা হয়। উপজেলা কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মরত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের এ আন্দোলন কর্মসূচির কারণে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে আসা গ্রামঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত রোগী সাধারণ চিকিৎসা সেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরছে। কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আহসানুল মাহামুদ রনো, দামুড়হুদা উপজেলা সভাপতি শামিম রেজা, সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিনুজ্জামান প্রমুখ। এ সময় বক্তারা বলেন, দেশের প্রন্তিক, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়া এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য দেশের ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার কাঠামো আমাদের দ্বারাই নির্মিত এবং পরিচালিত হয়। তবুও আমরা নিজেদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন এক গভীর দুশ্চিন্তÍা ও হতাশার মধ্যে অতিবাহিত করে আসছি। আমদের সামগ্রিক কর্মকা-ের সফলতা এবং ডিজিটাল স্বাস্থ্যখাতের আমূল পরিবর্তনে আমাদের অগ্রণী ভূমিকা থাকায় কর্তৃপক্ষ স্বেচ্ছায় ২০১৩ সালে আমাদের চাকরী রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করণের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু অত্যন্তÍ হতাশার বিষয় অদ্যাবধি সেই উদ্যোগ বাস্তবায়নের কোনো দৃশ্যমান কর্মকা- আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি। সরকার আমাদের শাস্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যদিয়ে দাবি পূরণ না করলে আমরণ অনশন শুরু করবো।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা কেন্দ্রীয় কমিটির সিন্ধান্ত অনুযায়ী আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত হাসপাতালের আউটডোরের সামনে অবস্থান ঘর্মঘট শুরু করেন। এ সময় তারা তাদের চাকরি জাতীয়করণের দাবি সম্বলিত স্মরকলিপি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রফিকুল ইসলামের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রদান করেন। অবস্থান কর্মসূচি হতে অবিলম্বে সিএইচসিপি সদস্যদের চাকরি জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জীবননগর উপজেলা সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইদুর রহমান, সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাওছার আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক জাফর প্রমুখ।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের অবস্থান কর্মসূচি গতকাল শনিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত পালন করা হয়। আলমডাঙ্গা উপজেলার সকল কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মরত হেলথ প্রোভাইটারগণ নিজ নিজ কর্মস্থল বন্ধ রেখে কর্মসূচিতে যোগ দেন। এ সময় বক্তারা বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক সরকারে একটি ভালো উদ্যোগ। এর মাধ্যমে স্ব্যস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া যায়, সে কাজই তারা করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন আন্দোলন করলেও সরকার তাদের দিকে নজর দিচ্ছে না। তাই তারা আন্দোলনে নেমেছেন। সরকার তাদের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে তাদের দাবি মেনে না নিলে আগামীতে ঢাকায় আমরণ অনশন শুরু করবেন বলে ঘোষণা দেন তারা।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়োজিত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডারদের (সিএইচসিপি) চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে গতকাল শনিবার সকাল থেকে অবস্থান ধর্মঘট শুরু হয়েছে। মেহেরপুর গাংনী উপজেলার ৩৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিবৃন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন। ফলে গ্রাম পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ হয়ে গেছে।
এ উপজেলার সকল কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিবৃন্দ সকাল থেকেই গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে জড়ো হন। দিনব্যাপী তারা অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির আলোকে ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে বলে জানান আন্দোলনকারীরা।
জেলা সিএইচসিপি দাবি বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা ও গাংনী উপজেলা কমিটির সভাপতি শরিফুল আলম পলাশ বলেন, ছয় বছর ধরে আমরা একই বেতনে চাকরি করছি। ৪-৫ মাস পর বেতন পাওয়া যায়। অস্থায়ী চাকরি এবং অনিয়মিত বেতনের ফলে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন সিএইচসিপিবৃন্দ।
আন্দোলনকারীরা আরও বলেন, চাকরি স্থায়ীকরণের আশা নিয়ে আমরা নিয়োগ নিয়েছিলাম। আমরা গ্রাম পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত রয়েছি। কিন্তু স্থায়ীকরণ না হওয়ায় অন্য চাকরিতেও যেতে পারছি না। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই সরকারি চাকরির বয়স পার করেছেন। তাই স্থায়ীকরণ না হওয়ায় এক অনিশ্চিত সময় পার করছেন সিএইচসিপি ও তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ।
কোটচাঁদপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার তারা কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের উপজেলা শাখার সভাপতি মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে অবস্থান কর্মসূচি শেষে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা।

Leave a comment