আখচাষিরাই চিনিকলের প্রাণ সেক্ষেত্রে তাদের সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ করা হয়েছে

আখচাষে উদ্বুদ্ধকরণে চাষিদের সাথে মতবিনিময়সভায় করপোরেশনের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন

দর্শনা অফিস: আখচাষে উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্পকরপোরেশনসহ দেশের সবকটি চিনিকলের কর্মকর্তারা। যেকোনো মূল্যে বেশি বেশি আখচাষে চিনিকলগুলোকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপ দেয়ার লক্ষ্যে মিল থেকে মিলে ছুটছেন করপোরেশনের চেয়ারম্যান একেএম দেলোয়ার হোসেনসহ কর্মকর্তারা। চিনিকলের কর্মকর্তা, সিএ, সিডিএসহ আখচাষিদের সাথে দফায় দফায় করছেন বৈঠক। চিনিকলের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক আখচাষের ঘোষণা দেয়া হয় চলতি রোপন মরসুমের শুরুতেই। করপোরেশনের কড়া নির্দেশনায় কোন কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে লিজে জমি নিয়ে আখচাষ করতে দেখা গেছে। বেশি বেশি আখ চাষে উদ্বুদ্ধকরণের জন্য আখের মূল্য বৃদ্ধি, সার-কীটনাশক সুবিধা, আধুনিক পদ্ধতিতে পুর্জি বিতরণ, ঘরে বসেই আখের মূল্য গ্রহণসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। এতো কিছুর পরও চলতি রোপন মরসুমে আখ রোপনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে খানেক হোচট খেতে হচ্ছে কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষকে। আখচাষে উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে গতকাল গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে কেরুজ অফিসার্স ক্লাব চত্বরে আখচাষিদের সাথে মতবিনিময় করেছেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান একেএম দেলোয়ার হোসেন। মতবিনিময়সভায় আখচাষিদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে একেএম দেলোয়ার হোসেন, কৃষি প্রধান দেশে চাষিরাই প্রাণ। যুগযুগ ধরে চাষিকূল আমাদের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে সমৃদ্ধ করেছে। কৃষি বান্ধব এ সরকার কৃষকের সকল সুবিধা নিশ্চিত করতে হাতে নিয়েছে বিভিন্ন কর্মসুচি। তেমনিভাবে দেশের চিনি শিল্পকে বাচাতে হলে চাষিভাইদের এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে। সেক্ষেত্রে বেশি বেশি করে আখ চাষের মধ্যদিয়েই সম্ভব দেশের এ মূল্যবান সম্পদ চিনিশিল্পকে রক্ষা করা। কৃষকদের পাশাপাশি মিলের কর্মকর্তাদের আন্তরিক হতে হবে। কৃষকদের সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে রাখতে হবে খেয়াল। কোনো কর্মকর্তা দ্বারা কৃষক হয়রানির শিকার হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে কিঞ্চিত পরিমাণ পিচুপা হবো না আমরা। আমরা খেয়াল করেছি, চলতি রোপন মরসুমে কৃষকদের পাশাপাশি চিনিকলের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে আখচাষের দিকে ঝুকে পড়ছে। আমি বিশ্বাসের সাথে বলছি, সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকলে চিনিকলের অতীত ঐতিহ্য ফিরে আসবেই আসবে। এ ঐতিহ্য ধরে রাখার দায়িত্ব আপনাদেরই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দেশের মৃত ও রুগ্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো পুনরুদ্ধার করে তা সচল করেছে। তাই আসুন সকল অনিয়ম, দুনীর্তিকে মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে একটি শিল্প সমৃদ্ধশীল হিসেবে গড়তে সকলেই আন্তরিক হই। অনুষ্ঠানের সভাপতি কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এনায়েত হোসেন বলেছেন, কেরুজ চিনিকল এ অঞ্চলের মানুষের একটি মূল্যবান সম্পদ। এ সম্পদ রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে সকলকে। বিশেষ করে আখচাষিদের আন্তরিকতায় পারে মিলকে আরো এগিয়ে নিতে। বিশ্বাস করি এ অঞ্চলের আখচাষিরা বেশ আন্তরিক। তারা আরও বেশি আন্তরিক হলে কেরুজ চিনিকলের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সময় লাগবে না। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, করপোরেশনের সিপিসিআর আমজাদ হোসেন ফকির, কেরুজ চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) একেএম সরোয়ারদি, মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মোশারফ হোসেন, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মনোয়ারুল ইসলাম, কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি তৈয়ব আলী, সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান, যুগ্মসম্পাদক খবির উদ্দিন। চিনিকলের ভারপ্রাপ্ত সিপিও গিয়াসউদ্দিনের উপস্থাপনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, চিনিকলের কৃষি বিভাগের ডিজিএম (সম্প্রসারণ) তাহাজ্জদ হোসেন, ডিজিএম (বীজ এগ্রো) উত্তম কুমার কু-ু, এসিডিও হাজি আনোয়ার হোসেন, সেলস অফিসার শেখ শাহবুদ্দিন। আখচাষিদের মধ্যে বক্তব্য দেন, আজিবর রহমান, আবুল বাসার, আজিজুল হক ডাবলু, আব্দুল আওয়াল, সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ। চলতি ২০১৭-১৮ রোপন মরসুমে সর্বমোট ১২ হাজার ৫শ একর জমিতে আখচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চিনিকলের নিজস্ব খামারে ১ হাজার ৬৪৫ একর এবং চাষিদের জমিতে ১০ হাজার ৮৫৫ একর জমিতে আখ চাষ করা হবে। এর মধ্যে ৯ হাজার ৯শ একর নতুন এবং ২ হাজার ৬শ একর জমিতে মুড়ি আখচাষ হওয়ার কথা থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চরমভাবে হিমশিম খেতে হচ্ছে মিল কর্তৃপক্ষকে। চলতি রোপন মরসুম গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়।
সূত্র থেকে আরও জানা গেছে, এরই মধ্যে প্রায় ৪ হাজার একর জমিতে আখ রোপন হয়েছে। সেক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রয়োজন আরও সাড়ে ৮ হাজার একর জমিতে আখ রোপন। আগামী ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ এ রোপন কাজ চলবে। গত ৫ মাসে যদি প্রায় ৪ হাজার একর জমিতে আখ রোপন করা হয়ে থাকে, তবে কি মাত্র ১ মাসে বাকি সাড়ে ৮ হাজার একর জমিতে আখ রোপন সম্ভব হবে? এ প্রশ্ন এখন অনেকেরই। কেউ কেউ বলেছে, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে রয়েছে লোকবল ঘাটতি। এর মধ্যে মাঠ পর্যায়ে চিনিকলের রয়েছে ব্যাপক দক্ষ জনবল সংকট। অবাক হলেও সত্য চিনিকলের ৬টি সাবজোনে ৬ জন কৃষিবিদ থাকার কথা থাকলেও, সেখানে একজনও নেই বরং সে পদগুলো চলছে উপসহকারী ইক্ষু উন্নয়ন কর্মকর্তা দিয়ে আর প্রতিটি ইউনিটে একজন ইক্ষু উন্নয়ন সহকারী থাকার কথা থাকলেও তাদের দিয়ে একাধিক ইউনিট চালানো হচ্ছে। তাদেরকে আবার পাশাপাশি ইউনিট না দিয়ে দূরদুরান্তে দেয়ায় কোনোটিই তারা ঠিকমত দেখভাল করতে পারে না। কর্মকর্তাদের এসব অন্তোষ আর অব্যবস্থাপনা নিয়ে কতটুকু লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে সেটাই এখন দেখার অপেক্ষামাত্র। চিনিকল কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ে আখরোপনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফল হলে আগামী আখ মাড়াই মরসুমে মাড়াইয়ের ক্ষেত্রে সম্প্রতিকালের রেকর্ড ভাঙবে বলে চাষিমহলের মন্তব্য।