উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানা অফিসার ইনচার্জের বাল্যবিয়ে বিরোধী কঠোর অবস্থান
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানা অফিসার ইনচার্জের বাল্যবিয়ে বিরোধী কঠোর অবস্থানের কারণে ভেস্তে গেছে বাল্যবিয়ের সকল আয়োজন। বাল্যবিয়ের হাত থেকে রক্ষা পেলো ৯ম শ্রেণিতে পড়ুয়া সদ্য টিনেজ-এ পা রাখা নাজমুন্নাহার।
শিউলী ফুলের মত কচি মুখশ্রী থেকে মুছে গেছে বাল্যবিয়ের দুঃসহ আতঙ্ক। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকেই বাল্যবিয়ের আতঙ্ক তাকে সার্বক্ষণিক তাড়িয়ে ফিরতো। ঘুমের ভেতর স্বপ্নেও তাকে তাড়া করতো এ মূর্তিমান আতঙ্ক। এমন দুঃসহ যন্ত্রণায় কাটে তার গত প্রায় এক-দেড় সপ্তাহ। কাউকে এ কষ্ট সে বোঝাতে পারেনি। অতি আপন মা-বাবাকেও না। শুধু নিজে নিজেই গুমরে গুমরে মরেছে। মাত্র এক রাতেই মায়াবি মুখজুড়ে নেমে আসে রাজ্যের অব্যক্ত যন্ত্রণারাশি!
কিন্তু এখন তার আর কোনো যন্ত্রণা নেই। নেই বাল্যবিয়ের সীমাহীন আতঙ্ক। মুখে তার এখন সোনালি হাসির ফোয়ারা ছুটছে। এখনও বাড়ির অনেকেরই মন খারাপ। তবুও নাজমুন্নাহারের কিশোরীসুলভ হাস্যে-লাস্যে গৃহকোণ উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে। আবার সুযোগ হয়েছে শিক্ষার আলোয় নিজেকে আলোকিত করার। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার এ অনবদ্য সুযোগে সে দিশেহারা। দুপুরে আকস্মিকভাবে বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় বাড়ির সকলের মন খারাপ হলেও প্রচ- খুশি হয়েছে সে। বড় অফিসার পুলিশ নিয়ে আসছে বিয়ে বাড়ি। এমন সংবাদ পেয়ে বর আর আসেনি। স্বর্ণালীর বাবাও নিরুপায় হয়ে অনুষ্ঠানিকতা প্রায় শেষ হলেও বিয়ের কর্মকা- থেকে পিছিয়ে যান। পুলিশের ভয় আর আতঙ্ক এখনও যায়নি তার বাবার। আলমডাঙ্গা উপজেলার নগরবোয়ালিয়া গ্রামের নিজাম উদ্দিনের কিশোরী কন্যা নাজমুন্নাহার। সে এ বছর হাটবোয়ালিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী। সম্প্রতি তার বিয়ে ঠিক হয় মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার শ^ানঘাট গ্রামের মোতালেপ হোসেনের ছেলে মাসুদ রানার সাথে। যেহেতু সে কিশোরী। সে কারণে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কৌশলে গত ১৩ জানুয়ারি ভাংবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব তোফাজ্জেল হোসেন ও ইউআইএসসি উদ্যোক্তা ০৫-০৯-১৯৯৯ তারিখ দিয়ে বয়স বাড়িয়ে জন্মনিবন্ধন তৈরি করে দেন। পরে ১৪ জানুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাওসার আহমেদ বাবলু স্বাক্ষর করেন। তার জন্মনিবন্ধনে বয়স বাড়িয়ে এ বিয়ের আয়োজন করা হয়। বিষয়টি গোপনে জানতে পেরে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাহাত মান্নান আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ ফকরুল আলম খানকে বিষয়টি দেখতে বলেন। আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জের নির্দেশে হাটবোয়াািলয়া ক্যাম্পের টু-আইসি এএসআই রওশন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। কিন্তু প্রশাসনিক এ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি আগে-ভাগে জেনে যায় বাল্যবিয়ের সাথে জড়িতরা। তারা বাল্যবিয়ে বন্ধ করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন বলে স্থানীয়সূত্রে জানা যায়।