ব্যাংকিং খাতে আরও বিপর্যয় ডেকে আনবে

দেশের ব্যাংকিং খাতে এখন অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা চলছে। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকগুলোতে চলছে লুটপাট। বেসিক ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। অপর দিকে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে সরকারঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা নানাভাবে মালিক বনে যাচ্ছেন। এ দিকে হঠাৎ করে সাধারণসভা ডেকে ব্যাংকের পরিচালক, চেয়ারম্যান ও এমডি বদলানো হচ্ছে। কোনো নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে থেকে ব্যাংকের মালিকানায় পরিবর্তন করা হচ্ছে না। ফলে আমানতকারীরা বিরাট ঝুঁকিতে পড়েছেন। এর মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক নামের একটি বেসরকারি ব্যাংকে আমানতের চেয়ে ঋণের পরিমাণ বেশি হওয়ায় অনেকটা দেউলিয়া হওয়ার অবস্থায় পড়েছে। এই ব্যাংকের উদ্যোক্তা চেয়ারম্যান ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ব্যাংকিং খাতে এমন অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে সরকার ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করেছে। জাতীয় সংসদে তা পাস হয়েছে। নতুন এ আইনের কারণে একই পরিবারের চারজন সদস্য যেকোনো বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন। আগে এই সংখ্যা ছিলো দুজন। এছাড়া তিন বছর করে পরপর দু’মেয়াদে তারা ব্যাংকের পরিচালক থাকতে পারতেন ছয় বছর। এখন নতুন আইনে তিন বছর করে তিন মেয়াদে মোট ৯ বছর পরিচালক থাকতে পারবেন। এর ফলে মূলত বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ‘পরিবারতন্ত্র’ কায়েম হবে। একটি বেসরকারি ব্যাংকে মাত্র ১০ শতাংশ অর্থের মালিকানা হচ্ছে পরিচালকদের, বাকি ৯০ শতাংশ টাকা জমা রাখেন সাধারণ আমানতকারীরা। মাত্র ১০ শতাংশ অর্থের মালিকদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে জনগণের স্বার্থকে ব্যাংকগুলোতে উপেক্ষা করে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার আইন পাস করা হলো।

সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন পুরো ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। মুষ্টিমেয় পরিচালকের স্বার্থ রক্ষার এমন প্রচেষ্টার ব্যাপারে ব্যাংকার, আমানতকারী এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকও সমর্থন করেনি। মনে রাখতে হবে, একটি ব্যাংকের সাফল্য নির্ভর করে আমানতকারীদের বিশ্বাস ও আস্থার ওপর। ব্যাংক যদি নিছক পারিবারিক একচেটিয়া প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়, তাহলে সেই ব্যাংকের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা থাকতে পারে না। সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন তা আরো বাড়িয়ে দেবে। কার্যত ব্যাংকিং খাতে লুটপাট এবং পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে সিন্ডিকেটেড ঋণের পরিমাণ বাড়বে, যা দেশের অর্থনীতিকে শেষ পর্যন্ত হুমকির মুখে ফেলবে। এই আইন অবিলম্বে পর্যালোচনা ও প্রয়োজনীয় সংশোধন করা দরকার।