একই পরিবারের ১২ জনই মাদক ব্যবসায়ী

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রায় গ্রামে গ্রামে এখন ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসা। এমন কোনো গ্রাম বা এলাকা নেই যেখানে মাদক নেই। অনেক ছোট ছোট ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। অনেক বেকার ছেলে চাকরির চেষ্টা না করে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসা করছে এবং তারা আসক্ত হচ্ছে। এতে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীও রয়েছে। তরুণদের সংখ্যাও অনেক। এ এলাকায় তেমন কোনো বড় মিল-কারখানা গড়ে উঠেনি।

বেকারত্বের সংখ্যাই বেশি। এটি সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় পাশ্ববর্তী দেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের মাদক সহজেই আসছে। খুলনা থেকে ইয়াবা আসছে চুয়াডাঙ্গায়। যেহেতু মাদকে লাভ বেশি, পুরো এলাকায় তরুণ-তরুণী এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে প্রতি ঘরে ঘরে মাদকাসক্ত হয়ে যাবে। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় একই পরিবারের স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ ১২ জনের সবাই মাদক ব্যবসায়ী। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাদকের ছোট ছোট আখড়ায় মাদক সেবন ও বিক্রি হয়। সেসবের অধিকাংশ একশ্রেণির পুলিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা পরিচালনা করে। তবে এলাকাবাসী বলেন, রাজনীতিবিদদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও মাদক ব্যবসা নিয়ে কোনো মতপার্থক্য নেই, সবাই এক। পুলিশের দুই শীর্ষ কর্মকর্তার বাড়ি ওই উপজেলায় হওয়ায় তারা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে সমগ্র জেলায় ব্যাপক অভিযান শুরু করেছেন। পুলিশের অভিযানের প্রেক্ষিতে মাদক সেবক ও ব্যবসায়ীরা গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলায় এক মহিলা মাদক সম্রাজ্ঞী এবং তার স্বামী, ছেলে-মেয়েসহ ১২ জনের সবাই দীর্ঘ ১৫ বছর ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসা করে আসছেন। এই পরিবারই আলমডাঙ্গাসহ জেলার অধিকাংশ এলাকায় মাদক সরবরাহ করে থাকে। একশ্রেণির পুলিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের তারা নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে আসছেন। ইতোমধ্যে ওই মাদক সাম্রাজ্ঞী গেফতার হলেও পরে জামিনে বের হয়ে আসে। ওই সাম্রাজ্ঞী পুলিশের একজন সোর্স বলেও এলাকাবাসী জানান। আলমডাঙ্গার রেললাইনের পাশে তারা থাকতো। আজ তারা মাদক ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক। তারা পুলিশের এক শ্রেণির কর্মকর্তা ও একশ্রেণির রাজনৈতিক নেতাকর্মী কোটিপতি বানিয়ে দিয়েছেন। ইয়াবা সহজলভ্য হওয়ায় এ এলাকার স্কুল-কলেজের অনেকে আসক্তি হচ্ছে। স্থানীয় জনগণ পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো সুফল পায় না। রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে তারা বলেন, এ অভিশাপ থেকে আমরা বাঁচতে চাই। কিন্তু কেউ কোন সাড়া দেয়নি। সর্বশেষ পুলিশের দুইজন অতিরিক্ত আইজি মীর শহীদুল ইসলাম ও সফিকুল ইসলাম চুয়াডাঙ্গা জেলাকে মাদকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে অভিযান শুরু করেন। এতে মানুষের মাঝে কিছুটা আশার আলো সঞ্চয় হয়েছে।

মাদক সম্রাজ্ঞী ও তার স্বামীসহ মাদক ব্যবসায়ী চার মেয়ে ও তাদের স্বামী এলাকায় থাকলে মাদক বন্ধ করা কঠিন হবে বলে এলাকাবাসী জানান। তারা বলেন, মাদক বন্ধে পুলিশের অভিযান চলা পর্যন্ত এই মাদক ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করছে না ভাব নিয়ে চলবে। কিন্ত এরা বসে থাকার মানুষ না। সম্পূর্ণ অপরিচিত তৃতীয় ও চতুর্থ হাত দিয়ে ঠিকই চতুরতার সাথে ব্যবসা চালিয়ে নিবে। মাদক সম্রাজ্ঞী জামিনে বেরিয়ে আসার পর এ এলাকায় ইয়াবার ব্যবসা বেড়ে যায়।

এলাকাবাসী জানায়, একেবারে ছিন্নমূল থেকে কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া মাদক সম্রাজ্ঞীর আলমডাঙ্গা শহরে রয়েছে তিনটি বাড়ি। ব্যাংক ব্যালান্স রয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকা। কিন্তু পুলিশ ছাড়াও অন্যান্য প্রশাসন এ বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করেছে। তারাও এর ভাগ পায়। কোনো কোনো কর্মকর্তার মনোরঞ্জনের জন্য সুন্দরি নারীও তাদের কাছে পৌঁছে দেয়।  চুয়াডাঙ্গা জেলা মাদকের ভয়াল ছোবল থেকে যুব সমাজকে রক্ষায় প্রশাসনকে আরো জোরালো ভূমিকা রাখায় দাবি জানান মাদকাসক্ত পরিবার।

এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা থানার ওসি আবু জিহাদ খান জানান, নিজের বাড়ি থেকে কাউকে জোরপূর্বক তুলে দেয়া পুলিশের আইনের ভেতর পড়ে না। তবে এলাকাবাসীর সাথে তিনি একমত পোষণ করে বলেন, মাদক সম্রাজ্ঞী এলাকায় থেকে মাদক ব্যবসা করে যাবে সে সুযোগ একেবারে শূন্যের কোটায়। তবে মাদক সম্রাজ্ঞীর উচিত হবে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করা।

এ ব্যাপারে খুলনা রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি দিদার আহমেদ বলেন, চুয়াডাঙ্গায় মাদকের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালাচ্ছে কি-না আমার জানা নেই। তবে মাদকসহ যেকোনো অভিযান চালাতে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হয় না, এটা তাদের দায়িত্ব।