সন্তানের পিতৃত্বের দাবিতে আইনি লড়াইয়ে জিতলো অসহায় কাজলী

দামুড়হুদার সুলতানপুরে প্রেমের অভিনয়ে কিশোরীর দেহভোগ : সন্তান প্রসব

দর্শনা অফিস: প্রায় ৪ বছর আগে কাজলী ছিলো ১৩ বছরের কিশোরী। হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে কাজলীর সাথে প্রেমের অভিনয় করেছিলো প্রভাবশালীর পরিবারের ছেলে হাসেম। মিথ্যা বিয়ের প্রলোভনে একাধিকবার কাজলীর দেহভোগের কারণে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে কাজলী। শুরুতে কেউ বুঝে উঠতে না পারলেও কাজলীর শারীরিক পরিবর্তনে এক সময় প্রকাশ পেয়ে যায় বিষয়টি। ঘটনাটি জানাজানি হলে প্রভাবশালী হাসেম হুমকি-ধামকি শুরু করে কাজলী ও তার পরিবারের সদস্যদের। কোনো হুমকিতেই পিছু হটেনি কাজলীর পরিবারের সদস্যরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজলীর গর্ভে বেড়ে ওঠে হাসেমের ঔরশজাত সন্তান। এক পর্যায়ে সন্তান প্রসব করে কাজলী। শুরু হয় আইনি লড়াই। নবজাতক সন্তানের পিতৃত্বের দাবিতে আদালতে মামলা দায়ের করেন কাজলীর নানা ওহাব আলী। অবশেষে সত্যের জয় হলো। প্রমাণ হলো কাজলীর সন্তানের পিতা হাসেম।
জানা গেছে, দামুড়হুদার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের সুলতানপুর বাগানপাড়ার দিনমজুর নুরুল ইসলামের ৫ মেয়ের মধ্যে কাজলী সেজো। একই এলাকার প্রভাবশালী বকুল মিয়ার ছেলে হাসেম মিথ্যা প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে কিশোরী কাজলীর সাথে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কাজলীর সাথে একাধিকবার দেহভোগ করে হাসেম। কাজলী যখন ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখনই জানাজানি হয় ঘটনাটি। বিয়ের জন্য বলা হয় হাসেমকে। সে সময় বেঁকে বসে হাসেম। সন্তান হাসেমের নয় বলে দাবি তোলে হাসেমসহ তার পরিবারের সদদস্যরা। হাসেমের চাচা ইউপি মেম্বার শহিদুল ইসলামকে নিয়ে প্রভাব খাটাতে থাকে অভিযুক্তের পরিবারের সদস্যরা। কাজলী ও তার পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়। অনাগত সন্তানের গর্ভপাত ঘটানোর বহু চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছে হাসেম ও তার পরিবারের সদস্যরা। সব ধরনের বাধা ও প্রতিকূলতা দমিয়ে রাখতে পারেনি হতদরিদ্র কাজলী ও তার পরিবারের কাউকেই। অনাগত সন্তানের পিতৃত্বের দাবিতে ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর কাজলীর নানা ওহাব আলী চুয়াডাঙ্গা আদালতে হাসেমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলা বিচারাধীন থাকা অব¯’ায় গত ২০১৪ সালের ৮ অক্টোবর কাজলীর সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। নাম রাখা হয় হাছিলা খাতুন। হাসেমের নামের সাথে মিল রেখেই হাছিলার নামকরণ করা হয়েছে। হাসেমের সন্তান হাছিলা নয় বলে বিজ্ঞ আদালতে দাবি করা হয়। কাজলীর পরিবারের প থেকে হাছিলার ডিএনএ পরীা করা হয় গত বছরের ৬ মার্চে। ১৬ মে কাজলী, হাছিলা ও হাসেমের ডিএনএ পরীার দিন ধার্য করা হয়। ২৯ অক্টোবর ডিএনএ পরীায় পরীক মোহাম্মদ নাজমুল আলম টুটুল স্বারিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ডিএনএ পরীায় সুদ”ঢ়ভাবে প্রমাণিত হয় যে হাসেম আলী কাজলী খাতুনের গর্ভজাত সন্তান হাছিলা খাতুনের জৈবিক পিতা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কাজলীর বাড়িতে গেলে দেখা যায় করুণ দ”শ্য। ৫ মেয়ে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে দিনমজুর নুরুল ইসলামের। কান্না জড়িত কন্ঠে নুরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী পরিছন বিবি বললেন, মাঠে দিন মজুর করে যা রোজগার হয় তাতে সংসার চালানো কষ্টের। তার ওপর কাজলীর সন্তানের পিতৃত্ব পরিচয়ে মামলা ও হাছিলার খরচ বহন করা দুরুহ হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি কাজলী গ্রামের একটি মুরগির খামারে স্বল্প বেতনে কাজ করে বাবার মাথার বোঝা কিছুটা কমানোর চেষ্টা করছে। বাড়ি গিয়ে দেখা যায় ৩ বছর বয়সি হাছিলাকে একা বাড়িতেই ঘুম পাড়িয়ে মুরগির খামারে কাজে গেছে কাজলী। খবর পেয়ে ছুটে বাড়ি আসে কাজলী। ফুটফুটে শিশু হাছিলাকে ঘুম থেকে তোলা হয়। হাছিলার কাছে জানতে চাওয়া হয় তার বাবার নাম। এ সময় হাছিলা চোখ মুছতে মুছতে অকপটে বললো হাসেম তার বাবা। এলাকাবাসীর অনেকেই বলেছে, শিশু হাছিলা যেনো পায় তার বাবার পরিচয় ও কাজলী যেনো পায় স্ত্রীর মর্যাদা।