দারিদ্রের কাছে হার মেনে আত্মহত্যা করলেন পুরাতন হাউলীর মতিয়ার

ভাঙ্গা দু’পা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে পাপুড় বিক্রি করলেও ভিক্ষার জন্য হাত পাতেনি কখনও

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: ‘মহানবীর শিক্ষা করো না ভিক্ষা, কর্ম করিয়া খাও’ মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স:) এর ওই বাণী ভালোমতোই মনে-প্রাণে ধারণ করেছিলেন জীবন সংগ্রামে দারিদ্রের কাছে হেরে যাওয়া দামুড়হুদার পুরাতন হাউলী গ্রামের মতিয়ার রহমান (৪৮)। দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে না পেরে শেষমেশ গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নিজ বাড়ির ঘরের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। এ ঘটনায় এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার পুরাতন হাউলী গ্রামের দিনমজুর শুকুর আলীর মেজ ছেলে মতিয়ার রহমান। অভাবের সংসারে লেখাপড়া বেশিদূর এগুতে পারেননি তিনি। সহায় সম্বল বলতে অল্প একটু ভিটে জমি। তাও মতিয়ারের পিতার নামে। তার সংসারে ছিলো স্ত্রী, ২ ছেলে ও ২ মেয়ে। ভ্যান চালিয়ে যা হতো তা দিয়েই কোনোমতে চলতো সংসার। অন্যান্য ভাইদের সাথে পালা করে খেতে দিতে হতো ব”দ্ধ মা-বাবাকেও। দিনরাত ভ্যান চালিয়ে সংসারের অভাব ঘোচাতে মতির ছিলো আপ্রাণ চেষ্টা। ৪ সন্তানের মধ্যে মেয়ে দুটো বড়। তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। নিজে বেশিদূর লেখাপড়া শিখতে পারেননি বলে ২ ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে এটাই ছিল ভ্যানচালক মতির শেষ ই”ছা। কিন্ত বিধি বাম। বছর তিনেক আগে ভ্যান চালাতে গিয়ে দামুড়হুদার চিৎলা এলাকায় ঘটে সড়ক দূর্ঘটনা। লাটাহাম্বারের ধাক্কায় দু’পা ভেঙে গুড়িয়ে যায় তার। ¯’ানীয়রা তাকে মূমুর্ষূ অব¯’ায় প্রথমে চিৎলা হাসপাতালে এবং পরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ঢাকা পঙ্গুতে নেয়ার পরামর্শ দেন। পরে তাকে ঢাকা পঙ্গুতে না নিয়ে নেয়া হয় ফরিদপুরে। ওখানইে ডা. অনাদী বাবুর কিনিকে ভর্তি করানো হয়। প্রতিবেশীদের কিছু আর্থিক সাহায্য আর নিজের জমানো সামান্য কিছু টাকা দিয়ে কোনমতে চিকিৎসা করানো হয় তাকে। প্রায় দু’বছর বাড়িতে বসে থাকতে হয় তাকে। পিতার অসহায়ত্বের কথা ভেবে লেখাপড়া বন্ধ করে সংসারের হাল ধরে দু ছেলে হেলাল (১২) ও বিল্লাল (১০)। হেলাল ইটভাটায় এবং বিল্লাল হোটেলে কাজ শুরু করে। এদিকে দু’বছর পর ক্রাচে ভর দিয়ে কোনোমতে হাটাচলা করতে পারা মতি থাকেননি বসে। স্ত্রী নুন্নী খাতুন বাড়ি থেকে পাপুড় ভেজে দিতেন আর মতি ওই পাপুড় দামুড়হুদা বাজারে বিক্রি করতেন। চিকিৎসার জন্য টাকা জোগাড় করতে না পেরে মাঝে মাঝেই আত্মহত্যার কথা ভাবলেও কারও কাছে হাত পাতেননি তিনি। ভিক্ষা না করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোনোমতে পাপুড় বিক্রি করতো। গত কয়েকদিন ধরে তার দু’পায়ে পুনরায় শুরু হয় প্রচ- যন্ত্রণা। শেষমেশ ওই যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে নিজ বসতঘরের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। রাত ৮টার দিকে মরহুমের জানাজার নামাজ শেষে নিজ গ্রামের কবর¯’ানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। ৩ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে নিহত মতি ছিলেন তৃতীয়। এদিকে মতির ম”ত্যুতে এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। সকলের মুখে মুখে একটাই কথা সে অনেক কষ্ট করলেও কারও কাছে হাত পেতে ভিক্ষা নেননি কখনও।