দ্বিগুণ মূল্যেও মিলছে হাত মোজা

প্রচণ্ড শৈতপ্রবাহ এ যেন প্রাকৃতিক সন্ত্রাস

নজরুল ইসলাম: তীব্র শীতে শরীরের কোন অংশ কতটুকু ঢাকলে শীত কম লাগে? মাথা যেহেতু তাপ ছাড়ে সেহেতু কান মাথাটা ঠিকমতো ঢাকতে পারলে শীতের তীব্রতা অনেকটাই কম অনুভূত হয়। তবে শরীরের অন্যাংশও গরম পোশাক দিয়ে ঢাকতে না পারলে যেনো টালিয়ে যায়। আর কাজে বেরিয়ে কিংবা বাইক চালাতে গেলে হাতমোজা অনিবার্য হয়ে ওঠে। তীব্র শীতে এবার চুয়াডাঙ্গায় হাতমোজা যেনো দুষ্প্রাপ্য পোশাক হয়ে দাঁড়িয়েছে। চুয়াডাঙ্গার গরম পোশাকের দোকানগুলোতে প্রত্যাশা মতো মোজা না পাওয়ার প্রেক্ষিতে প্রবীণদের কয়েকজন মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কাজের অংশ হাত। সে হাতকে ঢাকতে প্রয়োজন হাতমোজা। বাজার ঘুরেও মিলছে না হাত মোজা। এক আধটা দোকানে থাকলেও দোকানিরা দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন। সেই সাথে দীর্ঘদিন দোকানে পড়ে থাকা হাত মোজার জঞ্জাল চড়া দামে বিক্রি হয়ে গেছে।
ঋতুচক্রে পৌষ ও মাঘ মাস শীতকাল। প্রত্যেক ঋতুই তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির হয়। শীত ঋতু তার মধ্যে একটু আলাদা। এর প্রকৃতি বোঝা দায়। কখনও কনকনে ঠা-া আবার কখনও ঘনকুয়াশার চাঁদরে ঢাকা। আবার এ দু’টোর সাথে শৈত্যপ্রবাহ যুক্ত হয়ে জনজীবন করে তোলে বিপর্যস্ত। তাইতো কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছেন, শীতের সকাল, দরিদ্রের বস্ত্রের আকাল, শীতের সকাল, অসাম্যের কাল, ধনীর সুখ আর আনন্দ, শ্রেণি সংগ্রাম এ নিয়ে চলে দ্বন্দ্ব। শীতে পত্র-পল্লবহীন গাছপালাকে মনে হয় অলঙ্কার শূন্য বিধবা। কুয়াশা আচ্ছাদিত আকাশে সূর্যের সন্ধানে সকলের চোখ থাকে উর্ধ্বে। চলতি বছর চুয়াডাঙ্গায় শীতের পাশাপাশি শৈত্যপ্রবাহ আর কুয়াশায় উষ্ণতার পারদ নেমেছে প্রস্তুতির নিচে। হঠাৎ শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সবাই ছুটছেন গরম পোশাকের পিছে। পোশাকের পাশাপাশি হাতমোজার কদরও বেড়েছে। তাইতো পোশাকের দোকানে গিয়েই খোঁজ করা হচ্ছে হাতমোজার। তবে মেলা ভার। দ্বিগুণ দামেও মিলছে না হাতমোজা। গতকাল শনিবার দর্শনা বাজারের বিভিন্ন দোকান ঘুরে জানা গেলো হাতমোজা শূন্য দোকান। কারণ হিসেবে রোমান্স ফ্যান্সের মাহাবুব আলম বললেন, দোকানে নতুন পুরাতন যতো হাতমোজা ছিলো সব বিক্রি হয়ে গেছে। প্রতিদিনই অন্যান্য পোশাকের খরিদ্দারের চাইতে হাতমোজা কেনার খরিদ্দার সবচাইতে বেশি। যে মোজা ঢাকা থেকে আগে ৫৫-৬০ টাকা দরে কিনে এনে ৫-১০ টাকা লাভে বিক্রি করতাম। সে মোজা ঢাকাতে পাইকারি কিনতে হচ্ছে ১৫০ টাকা করে। নিয়ে এনে বিক্রি করব কতো টাকায়। একই জিনিস দ্বিগুনেরও বেশি দামে বিক্রি করে খরিদ্দার নষ্ট করতে চাই না। তাইতো বিক্রির নতুন করে দোকানে হাতমোজা রাখেনি। আবার এ সুযোগে বাজারের অনেক দোকানদার না পাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে ২-৩ গুণ দামে বিক্রি করছেন। হাতমোজা কিনতে আসা কোটালী গ্রামের কায়েস উদ্দীন বললেন, মোটরসাইকেল চালায় যে শীত পড়েছে না কিনে উপায় আছে। দাম যাই হোকনা কেনো। শীতে ধনীরা সুখে থাকলেও বস্ত্রহীন গরিব-দুঃখী মানুষগুলোর কাছে শীত কাম্য না। এ পরিস্থিতিতে অনেকেই যখন হাতমোজার পিছু ছুটছে তখনও হয়তো অনেকেরই গায়ে জুটছে না এক টুকরো গরম কাপড়। অন্যান্য বছরের ন্যায় চলতি বছর শীতার্ত মানুষের জন্য কম্বল কিংবা গরমের পোশাক বিতরণ খুব একটা চোখে পড়েনি। আবহাওয়া অফিস জানাচ্ছে, ১-২ দিনের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এ পরিস্থিতি থাকবে না। প্রচণ্ড শীত আর অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহ এ যেনো প্রাকৃতিক সন্ত্রাসে পরিণত হয়েছে। তাইতো দরিদ্র মানুষগুলো প্রহর গুনছে কখন পূর্ব আকাশে উঁকি দিবে লাল থালার সূর্যটা।