ক্ষমতার দাপটে স্থবির প্রশাসন : তদবির না মানলে নানা হয়রানি

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তারাও : উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা

স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক তৎপরতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাঠ প্রশাসনে ক্ষমতাসীনদের খবরদারি অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এ নিয়ে কোথাও কোথাও দলীয় গডফাদারদের সঙ্গে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনদের দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। এতে প্রশাসনের গতিশীলতা যেমন কমেছে তেমনি সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। উদ্বিগ্ন এ পরিস্থিতিতে প্রশাসনের নিষ্ঠাবান দক্ষ কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। অনেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে কৌশলে নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন।

তাদের ধারণা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে ক্ষমতাসীনদের দাপট ততই বাড়বে। তাদের অযাচিত হস্তক্ষেপে বিভিন্ন খাতে হ-য-ব-র-ল দশার সৃষ্টি হবে। যা সামাল দেয়া তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। অথচ প্রশাসনিক ব্যর্থতার সব দায় তাদের ঘাড়েই চাপবে। এছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের ছোটখাটো নেতাদের অন্যায্য তদবিরের হিড়িক এবং তা না মানলে নানা ধরনের হয়রানি ও তুচ্ছতাচ্ছিল্যের ঘটনাও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পীড়া দিচ্ছে। যদিও এক্ষেত্রে বিস্তর ভিন্ন চিত্রও রয়েছে।

প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টু অনেক কর্মকর্তা রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের আখের গোছাচ্ছেন। কেউ কেউ কৌশলে ক্ষমতাসীন নেতাদের ঘাড়ে ভর করে নিজেরাই নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করছেন। ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, ছোটখাটো চাকরি, প্রকল্প গ্রহণ, নিয়োগ-বদলি, প্রমোশন ইত্যাদি বিষয়ে নিজের তদবির নেতাদের নামে চালিয়ে বাড়তি ফয়দা লুটছেন।

অন্যদিকে প্রশাসনে খবরদারির সুযোগ না দেয়ায় ক্ষমতাসীন দলের সাংসদসহ প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাও বাড়ছে। ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ের তদবির না শুনলেই স্থানীয় নেতারা তা দলীয় স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটার কথা উল্লেখ করে হাইকমান্ডের কাছে অভিযোগ করছেন। এমনকি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জামায়াত-শিবিরের পক্ষপাতদুষ্ট চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক বদলির জন্যও তদবির করা হচ্ছে। তা না হলে আগামী নির্বাচনে স্থানীয়ভাবে দলের ভোট কমবে এমন ভয়ও দেখাচ্ছে। যা মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে কাজ করছে।

এ পরিস্থিতির সত্যতা স্বীকার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও মাঠপর্যায়ের ক্ষমতাসীন দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসি ছাড়াও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের ঝগড়া-বিবাদের এ কাহিনি নতুন নয়। সব আমলেই এ ঘটনা ঘটে। আর নির্বাচনের আগে এর মাত্রা স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা বৃদ্ধি পায়। তবে এবার বেশ আগেই তাতে বেপরোয়া গতি পেয়েছে। যা প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের গতিশীলতায় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন জনপ্রশাসনের দায়িত্বশীল এ কর্মকর্তা।

মাঠ প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুধু ক্ষমতাসীন দলের বড় নেতারাই নন, পাতি নেতা, হাফ নেতা, হবু নেতা, বহিরাগত নেতা, এমনকি ক্যাডাররাও চান প্রশাসন তাদের সমীহ করে চলুক। আর যদি ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কোনো মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী কিংবা এমপির নিকট ও দূরসম্পর্কে আত্মীয় হয়ে থাকেন তাহলে তো কথাই নেই। তারা নানাভাবে দাপট খাটিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে তটস্থ করে রাখেন। অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে অর্থনেতিক সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করেন। স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন টেন্ডার, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ নিজেদের লোকজনকে চাকরির অবৈধ সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে অনবরত প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। তা না হলে বদলি, ওএসডি কিংবা সংযুক্তকরণের হুমকি দিচ্ছেন। এতে প্রশাসনের কাজের গতি বিঘ্নিত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, দেশকে উন্নত বিশ্বের সারিতে পৌঁছানোর জন্য মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের একাত্ম হয়ে কাজ করতে হবে। তবে স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা মাঠ প্রশাসনের কাজে হস্তক্ষেপ করলে উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হবে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ও কর্তৃত্বে কিংবা দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড হস্তক্ষেপ করলে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হবে। তাই স্থানীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি। তাহলে দেশ অনেকদূর এগিয়ে যাবে। স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।

অন্যদিকে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করার নামে জেলা প্রশাসক কিংবা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা যেভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছেন তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে সিনিয়র এই সচিব বলেন, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যেসব সুপারিশ-পরামর্শ উপস্থাপন করবেন সেসব বিষয় বিশেষ গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে। তবে মাঠপর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা যাতে নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারেন সেটা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় থাকা দরকার। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা অনেক সময় রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিদের কারও কারও হস্তক্ষেপ ও খবরদারির অভিযোগ করেন। এটা খুবই দুঃখজনক বলে তিনি মনে করেন।

এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ভাষ্য, ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হতে এখনো পুরো এক বছর সময় বাকি থাকলেও সরকারি দলের নেতারা এখনই মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ‘সবকিছু শিগগিরই শেষ হয়ে যাবে যা করার এখনই করতে হবে’ নেতাকর্মীদের চাল-চলনে এমনটাই প্রকাশ পাচ্ছে। ঠিকাদারি, চাল-গম কেনাবেচা, কাবিটা-কাবিখার ভাগাভাগি, ভূমি দখল ও এলাকায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় কোনো কোনো এলাকার সরকারি দলের নেতাকর্মীরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। আর এ নিয়ে তারা প্রায়ই প্রশাসনের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছেন। যার খেসারত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাদেরই দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তারা জানান, রাজনৈতিক নেতাদের অযাচিত হস্তক্ষেপে প্রশাসন পদে পদে বাধাগ্রস্ত হলে কিংবা তাদের ওপর ক্ষমতার দাপট খাটানো হলে প্রশাসন স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা ও দক্ষতা হারায়। যার দায়ভার প্রশাসনের ঘাড়ে চাপলেও এর খেসারত আমলাদের দিতে হয় না। এর খেসারত দিতে হয় সরকারকে, শেষ বিচারে জনগণ ও দেশকে এবং নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীন দলকে। অথচ স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এটি কখনই বুঝতে চান না। হালুয়া-রুটির ভাগাভাগিই এদের একমাত্র লক্ষ্য থাকে। এতে সরকারের সুশাসন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূরণে বরাবরই ব্যর্থ হচ্ছে। আর এ শঙ্কা এবার আরও প্রবল হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন তারা।

প্রশাসনের একাধিক সূত্র হতাশাজনক এ পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রশাসনের কাজকর্মে ততই ভাটা পড়ছে। ফলে মোটা দাগে অগ্রাধিকার প্রকল্প ছাড়া সরকারের অন্যান্য উন্নয়ন কাজের গতি হারিয়েছে। বর্তমানে মন্ত্রণালয়কেন্দ্রিক অধিকাংশ কার্যক্রম ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে আছে।

এদিকে শুধু সিভিল প্রশাসনই নয়, সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের খবরদারিও আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। অনেক সময় তারা থানা থেকে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজ কিংবা দখলবাজসহ বিভিন্নন দাগী অপরাধী ছেড়ে দেয়ার জন্য পুলিশকে চাপ দিচ্ছে। তাদের অন্যায় আবদার না শুনলে নানাভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের দাপুটে নেতাকর্মীদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে বাধা দিতে গিয়ে কখনো কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা হামলার শিকার হচ্ছেন। এ ব্যাপারে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে গিয়ে পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে শাস্তিমূলক বদলির হুমকিও দেয়া হয়েছে।

অতিসম্প্রতি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থানা যুবলীগের সভাপতি মো. তমিজ উদ্দিনের ছোট ভাই রিয়াজ উদ্দিন মাতাল হয়ে সংশ্লিষ্ট থানার এক সাব-ইন্সপেক্টরকে বেধড়ক পিটিয়েছে। এ ঘটনার পর তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হলে যুবলীগ নেতা তমিজ উদ্দিন ছোট ভাইকে ছাড়িয়ে নেয়ার তদবির করে ব্যর্থ হয়ে পুলিশকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছে। এ ঘটনায় মারধরের শিকার সাবইন্সপেক্টর জাকারিয়া হাওলাদার বাদী হয়ে থানায় মামলা রুজু করেছেন।

এর আগে বান্দরবানে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালনায় বাধা দেয়ায় ছাত্রলীগের নেতারা চার পুলিশ কনস্টেবলকে বেধড়ক পিটিয়েছেন। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করার পর দলের নেতারা তাদের থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের হুমকি ধামকি দিয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাঠপর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, শুধু মানিকগঞ্জ কিংবা বান্দরবানেই নয়, সারাদেশেই যুবলীগ-ছাত্রলীগসহ দলের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারা নানাভাবে পুলিশের কাজে হস্তক্ষেপ করছেন। দীর্ঘদিন ধরে এ অপতৎপরতা অব্যাহত থাকলেও সম্প্রতি তা আরও জোরদার হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

খুলনা বিভাগের এসপি পদমর্যদার একজন কর্মকর্তা বলেন, শুধু আসামি গ্রেফতার কিংবা ছাড়িয়ে নেয়া নয়, পুলিশ বাহিনীতে বিভিন্ন নিয়োগেও সরাসরি হস্তক্ষেপ করছেন ক্ষমতাসীন দলের এমপিসহ প্রভাবশালী নেতারা। তাদের পাঠানো তালিকা অনুযায়ী কাজ না হলেই সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। নানা ধরনের অভিযোগ আনছেন পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

বিভিন্ন পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সূত্র জানায়, জেলার মন্ত্রী, মন্ত্রী মর্যাদার কর্মকর্তা, সংসদ সদস্য, সরকারি দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য এলাকাভিত্তিক তালিকা দিচ্ছেন। এমনকি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কোটার চেয়ে বেশি নিয়োগের তালিকা ধরিয়ে দিয়ে এসপিদের চাপ দেয়ারও নজির রয়েছে। এমপিরা ওপরের নির্দেশ মোতাবেক এলাকার কোটা অনুযায়ী নির্দিষ্টসংখ্যক নিয়োগ আদায় করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। এ অবস্থায় অনেক অযোগ্য প্রার্থীকেও পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ দিতে বাধ্য হচ্ছেন ঊর্ধ্বতনরা।

এদিকে এসব তদবিরে নিয়োগ প্রার্থীদের ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতাদের আত্মীয়স্বজন দাবি করা হলেও বাস্তবতা পুরোপুরি ভিন্ন। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতার মেয়াদের শেষ সময়ে আওয়ামী দলীয় সাংসদ ও প্রভাবশালী নেতারা নিয়োগবাণিজ্যে বেপরোয়াভাবে মেতেছেন। চলতি মাসে টাঙ্গাইল জেলায় কনস্টেবল নিয়োগে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত রেট উঠেছে। যা এখন প্রার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছে ওপেন সিক্রেট। যা সাধারণ প্রার্থীদের হতাশ করে তুলেছে।

এদিকে নিয়োগ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের অন্তঃকোন্দলের কারণে পরিস্থিতি আরও হ-য-ব-র-ল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক নেতার একজন প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া হলে অন্য নেতাও তার সমপরিমাণ সুবিধা চাওয়ায় বিপাকে পড়ছেন এসপিরা। এ ছাড়াও নানা বিষয় নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের অন্তঃকলহের কারণেও র‌্যাব-পুলিশকে প্রায়ই বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এর বাইরে দলীয় পরিচয় বহনকারী অপরাধীদের অবৈধ অস্ত্র কিংবা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের হাতে হাতে আটক করলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বিব্রতবোধ করছেন। একপর্যায়ে তাদের ছেড়ে দিতেও বাধ্য হচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব বিষয় সরকারের উচ্চপর্যায় অবহিত হওয়ার পরও কোনো প্রতিকার না হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনেকে হতাশ হয়ে চলমান স্রোতেই গা ভাসাচ্ছেন।

যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তার ভাষ্য, বিগত সময়ে পুলিশে নিয়োগে যেসব অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সেসব বিষয় তদন্ত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর নিয়ে পুলিশে হতাশা দেখা দেয়ার বিষয়টিও ঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা সত্যিই খুব অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে আছে। কোনো অপরাধের তদন্ত নিয়ে কাজ করলেই পদে পদে বাধা দেয়া হচ্ছে। আর দলীয় লোক খোদ এমপি কিংবা প্রভাবশালী নেতারা সরাসরি হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছেন। তাদের কথা অনুযায়ী কাজ না করলে মুহূর্তেই ওই অফিসারকে জামায়াত-শিবির কালিমা দিয়ে দেয়া হচ্ছে। যা সত্যিকার অর্থেই বিব্রতকর বলেও ওই পুলিশ কর্মকর্তা মনে করেন।