জাড়ে জড়ো হয়ে ঘরে থাকলে পেট চলবে নানে

কনকনে শীতে ইটভাটায় মাটি পানি দিয়ে কাদা করা শ্রমিকদের উক্তি

খাইরুজ্জামান সেতু: ‘জাড়কালে জাড় লাগছে বলে ঘরে জড়ো হয়ে বসে থাকলে তো আর পেট চলবে নানে। জাড় যতোই লাগুক কাজ করেই খেতে হবেনে। তাইতো সকাল হতে না হতেই ভাটায় লেগে গেছি কাজে।’ কনকনে শীতের মধ্যে কাজ করছো কীভাবে? এ প্রশ্নের জবাবে সাত সকালে চুয়াডাঙ্গার বুজরুকগড়গড়ি এলাকার একটি ইটভাটার শ্রমিকেরা তাদের নিজেদের ভাষায় এ মন্তব্য করে প্রতিবেদককে উদ্দেশ্য করে পাল্টা প্রশ্ন তুলে বলেন, এ জাড় ঠা-ার মধ্যে তোমারও তো জুত লেগেছে। তা না হলে মোটরসাইকেল নিয়ে কি কেউ আমরা কাজ করছি কীভাবে দেখতে আসে?
ঘন কুয়াশা আর প্রচ- শীতে নাজেহাল চুয়াডাঙ্গাসহ সারাদেশের মানুষ। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়াটা বেশ কষ্টের। এমন শীতের মধ্যেও ভোর থেকে অনায়াসে মাটি আর পানি দিয়ে ইটভাটায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন শত শত শ্রমিক। গতকাল শুক্রবার সকালে জেলার বেশকয়েকটা ইটভাটায় সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রচণ্ড শীত আর কুয়াশার মধ্যে ভাটার স্তূপ থেকে গুলানো মাটি নিচ্ছেন বেশ কিছু শ্রমিক। সেখান থেকে ট্রলি দিয়ে আবার ইট বানানোর লাইনে মাটি নিচ্ছেন কেউ কেউ। সেখানে ইট বানিয়ে যাচ্ছেন আরও কিছু শ্রমিক। এভাবেই ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে ইটভাটা শ্রমিকদের।
শ্রমিকেরা জানান, প্রতিদিন ভোর ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কাজ করতে হয় ইটভাটায়। তবে বর্তমানে প্রচ- শীত আর কুয়াশার কারণে একটু দেরিতেই কাজ শুরু করছে শ্রমিকরা। খুলনা পাইকগাছা গ্রামের কামাল হোসেন একজন ইটভাটা শ্রমিক, তিনি চুয়াডাঙ্গা ইট তৈরি করার জন্য শ্রমিক হিসেবে এসেছে, তিনি জানান শীত হোক, আর যাই হোক! আমাদের সকলেরই ভোরে উঠতে হয়। না হলে হাজরে হবে না। তবে শীত ও কুয়াশার দিনে একটু দেরিতে কাজ শুরু করি। আর কাজ শুরু করলে কাজের ব্যস্ততায় শীত-কুয়াশার কথা মনেই থাকে না। চুয়াডাঙ্গার বুজরুকগড়গড়ি এলাকার এপেক্স ইটভাটার শ্রমিকদের সর্দ্দার তরিকুল ইসলাম জানান, আমরা অন্যদিনে অন্তত ১৬ হাজার ইট তৈরি করি। কিন্তু এ শীতের দিনে ১০ হাজারের বেশি করতে পারছি না। এতে আমাদের হাজিরা কম হচ্ছে। মহিলা শ্রমিক শিউলি জানান, আমরা ভোর থেকেই মাটির স্তূপ থেকে মাটি কেটে ট্রলিতে ভরে মেশিনে দেয়া শুরু করি। শুরুতে শরীরে শীতবস্ত্র থাকলেও পরে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে খুলে রাখি। কাজ শুরু করার সময় কিছুটা শীত লাগলেও কাজ শুরুর পরে শীত পালিয়ে যায়। খুলনা পাইকগাছার আরেক ইটভাটা শ্রমিক ওহাবও চুয়াডাঙ্গায় কাজ করতে এসেছে। তিনি জানান, সারা বছর এলাকাতে আমরা অন্য কাজ করি যেমন আমি নিজেই চিংড়ি ঘেরের ব্যবসা করি। ইট তৈরির মওসুমে অর্থাৎ কার্তিক মাস থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত ইটভাটায় কাজ করার জন্য নিজ এলাকা থেকে অন্য জেলাতে ইট তৈরির কাজ করে থাকি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শীত লাগলে তো আর পেট শুনবে না। তবে কাজ করতে করতে একসময় গরম লেগে যায় তখন আর কিছু মনে হয় না।

Leave a comment