চুয়াডাঙ্গার একুশে পদক প্রাপ্ত সাধক খোদা বকস শাহ’র ২৮তম প্রয়াণদিবস কাল : দু’দিনব্যাপী স্মরণ উৎসবের আয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জাহাপুরের একুশে পদকপ্রাপ্ত মরমী সাধক খোদা বকস শাহ’র ২৮তম প্রয়াণদিবস আগামীকাল রোববার। উপমহাদেশের প্রখ্যাত এ কবির প্রয়াণদিবস উপলক্ষে তার নিজ আখড়ায় দু’দিনব্যাপী স্মরণ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে ।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আগামীকাল রোববার বেলা সাড়ে ১০টায় কবির জাহাপুর মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি, সন্ধ্যায় আলোচনাসভা ও সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে স্মরণ উৎসবের দিনটি পালন করা হবে। পরদিন সোমবার বেলা ১০টায় কবিতা আবৃত্তি, মরমী বাউল গান, পালাগান এবং বিকেল ৪টায় পূর্ণ সেবা নিয়ে সাধুদের বিদায় জানানো হবে।
আলমডাঙ্গার জাহাপুরে মরমী কবি খোদা বকস শাহ বাংলা ১৩৩৪ সালের ৩০ চৈত্র (ইংরেজি ১৯২৮ খ্রি:) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঘোলদাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি অভিনয় ও সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হন। যাত্রাদলে যোগ দেন। তার ছিলো অসাধারণ সুরেলা কন্ঠ। যাত্রামঞ্চে তিনি বিবেকের ভূমিকায় বিবেক সঙ্গীত পরিবেশন করতে থাকেন। ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত যাত্রাদলে তার সঙ্গীত জীবন অতিবাহিত হয়। ১৭ বছর বয়সে খোদা বকস ভাবসঙ্গীত শিক্ষায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি হরিণাকু-ুর শুকচাঁদ শাহ’র শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। পরে তিনি অমূল্য শাহ’র আখড়ায় যান। সেখানে অতি অল্প সময়ে তিনি ভাবসঙ্গীতে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেন।
১৯৭৬ সালে তিনি ফকিরি পোশাক গ্রহণ করেন। ১৯৮৩ সালের ৯ জুন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে লালন সঙ্গীতের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮৫ সালে বাংলা একাডেমি খোদা বকস শাহকে বাংলা একাডেমি ‘ফেলো’ পদ প্রদান করে। ১৯৮৬ সালে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ১৯৮৭ সালের ৩১ মার্চ তিনি শিল্পকলা একাডেমির চাকরি ছেড়ে নিজের আখাড়ায় ফিরে আসেন। ১৯৮৯ সালের শেষ দিকে তিনি ভীষণ অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। ১৯৯০ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী রাহেলা খাতুন, পুত্র আব্দুল লতিফ শাহ ও কন্যা মালঞ্চকে রেখে যান। নিজস্ব আখড়া বাড়িতে তাকে সমাহিত করা হয়। ১৯৯১ সালে খোদা বকস শাহকে বাংলা একাডেমি মরনোত্তর একুশে পদক প্রদান করে। খ্যাতিমান মরমী কবি খোদা বকস শাহ’র একমাত্র উত্তরসুরি আব্দুল লতিফ শাহ কবি হ্নদয়ে অব্যক্ত সাধনার তীর ধরে তার অপ্রকাশিত গান নিয়ে ভক্তদের মাঝে চর্চাবৃত্তি অব্যাহত রেখেছেন। কবিপুত্র আব্দুল লতিফ শাহ ভারতের মনের মানুষ চলচ্চিত্রে লালনের আদি সুরের গান গেয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন। খোদা বকস শাহ স্মৃতি সংসদ ও তার অগণিতভক্ত অনুরাগীরা প্রতিবছরই তার জন্ম ও প্রয়াণদিবস পালন করে আসছে। তিনি জীবদ্দশায় ৯৫০টি গান রচনা করেন। তার মাজারটি এখনও অযতœ ও অবহেলায় পড়ে আছে। জাহাপুরে কবির সমাধিস্থলকে ঘিরে পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স নির্মাণ এবং কবির জন্ম-প্রয়াণদিবস দুটি সরকারিভাবে পালনের দাবি তুলেছেন তার ভক্ত-অনুরাগী ও গুণীজনেরা।