আলমডাঙ্গাসহ জেলার অধিকাংশ মাধ্যমিক স্কুল ও মাদরাসায় বার্ষিক ক্রীড়া না হওয়ার অভিযোগ

রহমান মুকুল: আলমডাঙ্গাসহ জেলার অধিকাংশ মাধ্যমিক স্কুল ও মাদরাসায় বার্ষিক ক্রীড়ার আয়োজন করা হয় না। মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠিত হওয়ার ঐতিহ্য রয়েছে।
এখন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় বিসর্জন দিয়ে এ প্রজন্মের অনেক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এখন অসামাজিকতার অভিযোগ উচ্চকিত হচ্ছে। তাছাড়া কম্পিউটার গেম, অনলাইন চ্যাটিং তো রয়েছেই। রয়েছে একাধিক প্রাইভেট ও কোচিঙের দুর্বিসহ চাপ। এসময়ে শিক্ষার্থীকে সামাজিকীকরণই সবচে’ বড় চ্যালেঞ্জ। আধুনিক গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীকে সামাজিক ব্যক্তিত্বরুপে গড়ে তোলাই শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে স্কুল-মাদরাসায় নিয়মিত বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন বড্ড প্রয়োজন। এমন মন্তব্য সচেতন মহলের। তাদের মতে খেলার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত স্বার্থের পরিবর্তে গোষ্ঠীগত বা সমাজের স্বার্থ বড় করে দেখার শিক্ষা পায়। সামাজিক কল্যাণ উপলব্ধি করতে শেখে। ঐক্য ও সংহতির শিক্ষা লাভ করে। সকলের সাথে মিলেমিশে হয়ে ওঠে অসাম্প্রদায়িক ও শ্রেণিবৈষম্যহীন। কিন্তু আলমডাঙ্গার ৬০-৬২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসার মধ্যে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। বিগত দীর্ঘ বছরে একবারও বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠিত হয়নি এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই অধিকাংশ। এ চিত্র শুধু আলমডাঙ্গা উপজেলার না, সমস্ত জেলারও। জেলা সদরের ৩২টি মাধ্যমিক ও ১০টি মাদরাসা, জীবননগর উপজেলার ২৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৮টি মাদরাসা ও দামুড়হুদা উপজেলার ৩৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১১টি মাদরাসার মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি বাদে সবগুলোর অবস্থা তথৈবচ। অথচ প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতনের সাথে ক্রীড়ার টাকা আদায় করে নিয়ে থাকে। রীতিমত রশিদের মাধ্যমে মাসে মাসে বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্লজ্জেরমত শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নিলেও স্কুল-মাদরাসাগুলো বছরে একবারও খেলাধুলার ব্যবস্থা করে না।
অথচ, খেলাধুলা কো-কারিকুলামের উল্লেখযোগ্য অংশ। শিক্ষার পরোক্ষ মাধ্যমও বটে। তাছাড়া খেলা আর মোটেও অবহেলার কিছু না বরং যেকোনো পেশারচে’ অনেক সম্মান ও গৌরবের। অর্থের দিক দিয়েও রীতিমত তুলনারহিত। খেলার মাধ্যমে শিক্ষার্থী তার জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত, নানা বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে সাফল্য ছিনিয়ে নিতে শেখে। জীবনের চরম ব্যর্থতায়ও ভেঙে না পড়ে পুনরায় বিজয়ী হওয়ার অনুপ্রেরণা খুঁজে পায়।
হারদী মীর সামসুদ্দীন আহম্মেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম সাগর বলেন, আমাদের মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসাগুলোর অধিকাংশে বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠিত না হওয়া দুর্ভাগ্যের। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রয়োজন। উন্নয়ন খাতের টাকা উন্নয়নে, আইসিটির টাকা আইসিটিতে, গ্রাচুইটির টাকা গ্রাচুইটিতে, লাইব্রেরির টাকা লাইব্রেরি খাতে, তেমনি ক্রীড়ার টাকা ক্রীড়া খাতে ব্যয় হওয়া উচিত। আলমডাঙ্গা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল বারী বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ক্রীড়ার বিষয়টি আসলে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। তারপরও প্রতি মাসিক মিটিংয়ে প্রধান শিক্ষকদের তাগাদা দেয়া হয় বার্ষিক ক্রীড়ার জন্য। তাছাড়া জাতীয় পর্যায়ের সকল খেলায় অংশ নিতে বাধ্য করা হয়।