স্টাফ রিপোর্টার: মিয়ানমারের রাখাইনে যে গোষ্ঠীর হামলার জবাবে রোহিঙ্গাদের উপর সেনাবাহিনী নিধনযজ্ঞ চালিয়েছে, সেই আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ফের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গত বছর ২৪ অগাস্ট রাতে একযোগে মিয়ানমারের ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালায় এই গোষ্ঠী। এরপর সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
সেনাবাহিনীর ওই অভিযান শুরুর পর অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দিয়েছিল আরসা। এরপর প্রায় চার মাস তাদের আর কোনো সাড়া-শব্দ মেলেনি। গত শুক্রবার রাখাইনে সেনাবাহিনীর একটি ট্রাকে হামলায় তিনজন আহত হওয়ার পর আবার তারা আলোচনায় এসেছে।
হামলার জন্য মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তারা আরসাকেই দায়ী করেছিলেন। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতা আতা উল্লাহ রোববার এক টুইটে হামলার দায় স্বীকার করেছেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। টুইটে তিনি লিখেছেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে রক্ষা, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ‘বার্মিজ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের’ বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো সুযোগ নেই।
‘মানবিক প্রয়োজন ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ’ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনার জন্য রোহিঙ্গাদের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
রাখাইনে সন্ত্রাস নির্মূলের নামে সেনাবাহিনীর ওই অভিযানে এক মাসেই ৬ হাজার ৭০০ মানুষ নিহত হয় হয় বলে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মেদসঁ সঁ ফ্রঁতিয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। শত শত রোহিঙ্গা গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ার প্রমাণ উঠে এসেছে স্যাটেলাইট চিত্রে। সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন রোহিঙ্গা নারীরা। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ভাষ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করতে যে অভিযান চালায়, তার গুরুত্বপূর্ণ ও ভয়াবহ একটি অংশ ব্যাপক হারে ধর্ষণ। এই হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের মুখে রাখাইনের রোহিঙ্গাদের অর্ধেকের বেশিই বাংলাদেশে চলে এসেছে। তাদের আবার মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে দেশটির সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের একটি সম্মতিপত্র সই এবং সে অনুযায়ী যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়েছে।
এই প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গারা নিরাপত্তার সঙ্গে স্বভূমে ফিরতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। এমন সময়ে আবার মিয়ানমার সেনাবাহিনীর উপর হামলায় আরসার দায় স্বীকারের খবর এলো।