৫ মাসে সাড়ে ৩ হাজার একর জমিতে আখ রোপন সম্পন্ন ॥ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ১ মাসে ৯ হাজার একর জমিতে আখ রোপণ করতে হবে
দর্শনা অফিস: দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়াত্ব শিল্প প্রতিষ্ঠান দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির চিনিকলে চলতি রোপন মরসুমে আখ রোপণের ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদী এ ফসলে ক্রমাগত লোকসান ও হয়রানিতে অতিষ্ট কৃষকরা মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চাষীদের পাশাপাশি লাঙ্গল কোদাল নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সুগার করপোরেশনের নির্দেশে ঘুম থেকে উঠে মাঠমুখী ছুটছেন। চিনিকল সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০১৭-১৮ রোপণ মরসুমে সর্বমোট ১২ হাজার ৫শ’ একর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চিনিকলের নিজস্ব খামারে ১ হাজার ৬৪৫ একর এবং চাষিদের জমিতে ১০ হাজার ৮৫৫ একর জমিতে আখ চাষ করা হবে। এর মধ্যে ৯ হাজর ৯শ’ একর নতুন এবং ২ হাজার ৬শ’ একর জমিতে মুড়ি আখ চাষ করা হবে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চাষিদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। চাষিদেরকে আখের জমিতে সার প্রয়োগ, বীজ ক্রয়, কীটনাশক প্রয়োগ, নালাকাটা, আখবাঁধা প্রভৃতি কাজের জন্য প্রায় ৫ কোটি টাকা ঋণ প্রদানের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। এদিকে বর্তমানে একই জমিতে বছরে ৩ বার ফসল উৎপাদন হওয়ায় বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে অল্প খরচে ও স্বল্প সময়ে লাভজনক ভুট্টার আবাদসহ সবজি জাতীয় ফসল জনপ্রিয় হওয়ায় দীর্ঘ মেয়াদী আখ চাষ থেকে কৃষকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আখ চাষ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ায় কাক্সিক্ষত আখ না পেয়ে নির্দিষ্ট সময়ের বহু পূর্বেই চিনিকলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরে। বিগত ২-৩ বছর ধরে কেরু চিনিকলে আখ রোপণ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক কম রোপণ হচ্ছিলো। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আখের অভাবে চিনিকলটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দেয়। চলতি বছর কেরু চিনিকলে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চাষিদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং উন্নত প্রযুক্তিতে আখ চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পরামর্শসহ চাষিদের সর্বাধিক সেবা প্রদানের পদক্ষেপ নিয়েছে কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন কর্তৃক চিনিকলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আখ চাষ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে কিছুটা হলেও সুফল দেখা দিয়েছে আখ রোপণের ক্ষেত্রে। যে সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাড়ি চিনিকল এলাকার বাইরে কিংবা নিজস্ব জমি নেই তারা চাকরি বাঁচাতে চাষিদের নিকট থেকে উচ্চমূল্যে হলেও জমি লিজ নিয়ে আখ চাষে মেতেছে। এ সুযোগে চাষিরাও লিজ মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। চাষে অনাভ্যস্থ কর্মকর্তারাও চাকরি বাঁচাতে আখ চাষে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন মাঠে। কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এনায়েত হোসেন বলেছেন, করপোরেশনের আখ চাষের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কষ্টসাধ্য হলেও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। সকলের সহযোগিতা পেলে আমরা একটা সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছুতে পারবো বলে আশা করছি। সরকারও এ বছর আখের মূল্য মিল গেটে প্রতি কুইন্টাল ২৭৫ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৩১২ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করায় চাষিরাও উৎসাহিত হচ্ছে। চলতি রোপণ মরসুম গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়। ইতোমধ্যে গতকাল রোববার পর্যন্ত সাড়ে ৩ হাজার একরের বেশি জমিতে আখ রোপণ হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ এ রোপণ কাজ চলবে। এবারের রোপণ মরসুমে সাড়ে ১২ হাজার একর জমিতে আখ রোপণ করা হবে বলে জানান, চিনিকলের কৃষি বিভাগের ডিজিএম সাহাজ্জদ হোসেন খান। তবে মাঠ পর্যায়ে চিনিকলের রয়েছে ব্যাপক দক্ষ জনবল সংকট। অবাক হলেও সত্য চিনিকলের ৬টি সাবজোনে ৬জন কৃষিবীদ থাকার কথা থাকলেও, সেখানে একজনও নেই বরং সে পদগুলো চলছে উপসহকারী ইক্ষু উন্নয়ন কর্মকর্তা দিয়ে আর প্রতিটি ইউনিটে একজন ইক্ষু উন্নয়ন সহকারী থাকার কথা থাকলেও তাদের দিয়ে একাধিক ইউনিট চালানো হচ্ছে। তাদেরকে আবার পাশাপাশি ইউনিট না দিয়ে দূর-দূরান্তে দেয়ায় কোনোটিই তারা ঠিকমত দেখভাল করতে পারে না। কর্মকর্তাদের এসব অসন্তোষ আর অব্যবস্থাপনা নিয়ে কতটুকু লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে সেটাই এখন দেখার অপেক্ষামাত্র। এ দিকে ৫ মাসে সাড়ে ৩ হাজার একর জমিতে আখ রোপণ করা হয়েছে, তবে আগামী ১ মাসে কিভাবে ৯ হাজার একর জমিতে আখ রোপণ শেষ করবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। চিনিকল কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফল হলে আগামী আখ মাড়াই মরসুমে মাড়াইয়ের ক্ষেত্রে সম্প্রতিকালের রেকর্ড ভাঙবে।
উল্লেখ্য, চলতি আখ মরসুমে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশেনের বেধে দেয়া নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রয়েছে ৮০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৫ হাজার ৮শ’ মেট্রিকটন চিনি উৎপাদন করতে হবে। ৭০ মাড়াই দিবসে চিনি আহরণের গড় হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে ধারণা করা হচ্ছে আখ মাড়াইয়ের ক্ষেত্রে লক্ষমাত্রা অর্জন হলেও হতে পারে, সেক্ষেত্রে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অনিশ্চিত। কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে আহরণের গড় হার নির্ধারণের বিষয়টি। তবে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এনায়েত হোসেন আশাবাদী বড় ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে না পরলে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা আর্জন সম্ভব হতে পারে।