প্রসঙ্গঃ হলভাড়া এবং রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অনুমোদন

কোনো স্থান বা ঘর ভাড়া নেয়া মানে পুলিশের অনুমোদন নেয়া নয়। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোনো কর্মকা-ের জন্য পুলিশের অনুমোদনের গুরুত্ব রয়েছে যথেষ্ট ভিন্নতা। ১ জানুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর চুয়াডাঙ্গার আয়োজনে বিক্ষোভ, লাঠিচার্জ ও পাল্টা আক্রমণের পর রুজুকৃত মামলার প্রেক্ষিতে শ্রীমন্ত টাউনহল ব্যবহারের নির্দিষ্ট ভাড়া পরিশোধ করে তা ভাড়ায় নেয়ার ঘটনাটি প্রাসঙ্গিকতা পেয়েছে। পৌরসভায় ভাড়া পরিশোধ করে শ্রীমন্ত টাউনহল একদিনের জন্য ভাড়ায় নেয়া আর রাজনৈতিক কর্মকা- বা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের জন্য পুলিশ প্রশাসনের অনুমোদন নেয়া কি এক কথা? নিশ্চয় নয়।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ১ জানুয়ারি। একইদিন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছাত্রসমাজের। আর গতকাল ৪ জানুয়ারি ছিলো বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। তিনটি ছাত্র সংগঠনই পৃথক তিনটি রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন। ফলে যখন যে দল বা পার্টি ক্ষমতার মসনদে তখন সেই দলের অঙ্গ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর রঙ যে প্রত্যাশার চেয়েও উজ্জ্বল হবে তা যেমন অনুমান করতে কষ্ট হয় না, তেমনই বিরোধীদলে কিংবা কোনো কারণে সংসদের বাইরে যাওয়া রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের বেলায় অনুমোদনের গুরুত্বটাও খাটো করে দেখলে চলে না। বিশেষ করে আমাদের দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এসবই দস্তুর। তারপর যখন ক্ষমতার পূজারি হওয়া পুলিশের কোনো কোনো কর্মকর্তার তোষামোদী বা অতিমাত্রার দমন নীতি বিদ্যমান হয় তখন দৃশ্যপট আর যায় হোক গণতন্ত্রের সাক্ষ্য দেয় না।
ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গার নেতৃবৃন্দ ১ জানুয়ারি নানা কর্মসূচি হাতে নেয়। শ্রমীন্ত টাউনহলের ভাড়া বাবদ ৭শ টাকা পরিশোধ করে পৌরসভার ছাড়পত্র নিলেও পুলিশের দাবি, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের জন্য প্রশাসনের অনুমোদন নেয়া হয়নি। তারপরও শ্রীমন্ত টাউনহল ও শিল্পকলা একাডেমি চত্বরের মধ্যেই কর্মকা- সীমিত রাখার আহ্বান জানায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শোভাযাত্রা করতে না পেরে বিক্ষোভ প্রদর্শনের পরপরই পুলিশ শক্তি বাড়ায়। শ্রীমন্ত টাউনহলে লাঠিচার্জ শুরু করে। ছাত্রদলের জেলার শীর্ষ নেতাকে পুলিশ আটক করে। ছাত্রদল পাল্টা আক্রমণে তাকে ছাড়িয়ে নিতে সক্ষম হলেও ততোক্ষণে অনুষ্ঠানস্থল এক ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে, আহত হয়েছে ছাত্রদলের উপস্থিত প্রায় সকলে। এ ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে মামলা রুজু করেছে।
রাজনৈতিক কর্মকা- বা কর্মসূচি পালনের জন্য অনুমতি যদি নিতেই হয় তা হলে সকল দল বা পার্টিরই নেয়া উচিত। কোন দলের জন্য অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা করে তুলে কৌশলে দমনই যদি উদ্দেশ্য হয় তা হলে তাকে গণতন্ত্র বলা চলে না। আবার হল বা ঘর কিংবা স্থান ব্যবহারের জন্য ভাড়া নেয়াকে অনুমোদন নেয়া হয়েছে ধরে নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনকারী নেতাকে আর যাই হোক বোদ্ধা বলা চলে কি? ছাত্র সংঠনের নেতা নির্বাচনে নির্বাচকদের অদূরদর্শিতা সংগঠনকে খুব বেশিদূর এগুতে দেয় না। নেতার নেতৃত্বে শুধু ব্যক্তিত্ব বা দুর্দান্ত সাহস থাকলে চলে না বিচক্ষণতাও প্রয়োজন, একই সাথে প্রয়োজন সকল দলের জন্যই সমান অধিকার, সমান পরিবেশ।