ধর্ষণ কিংবা অন্তঃসত্ত্বার আলামত না মেলায় বাদীসহ সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া

চুয়াডাঙ্গা হায়দারপুরের চম্পার ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট মামলার তদন্তকর্তার নিকট প্রেরণ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের বদরগঞ্জ জীবনার মণ্টু মিয়ার ধর্ষণের শিকার অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার অভিযোগ তুলে মামলা করা সেই চম্পার ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট পুলিশের হস্তগত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মেডিকেল টিম মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর তোজাম্মেল হোসেন বরাবর প্রেরণ করে। ডাক্তারি পরীক্ষায় অন্তঃস্বত্ত্বা কিংবা ধর্ষণের আলামত না মেলায় মামলার বাদীসহ সহযোগিদের বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া করতে যাচ্ছে পুলিশ।
চম্পার ডাক্তারি পরীক্ষায় অন্তঃসত্ত্বার যেমন প্রমাণ মেলেনি, তেমনই ধর্ষণেরও আলামত পাওয়া যায়নি। তাছাড়া চম্পা নিজেও লিখিতভাবে জানিয়েছে, সে ধর্ষণ বা অন্তঃসত্ত্বা হয়নি, তারই খালা ফাতেমা খাতুন ফতেসহ তার নিজ গ্রাম চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের হায়দারপুরের এক মেম্বার এবং প্রতিবেশী মামা জীবনার মণ্টু মিয়ার নিকট থেকে তিন লাখ টাকা ও দু বিঘা জমি আদায় করে দেয়ার কথা বলে ওই মামলা করার পরামর্শ দিয়েছিলো বলে জানিয়েছে। জীবনা গ্রামের অর্থশালী মণ্টু মিয়ার বাড়িতে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে গৃহপরিচারিকার কাজ করার এক পর্যায়ে চম্পা তার পিতৃতূল্য গৃহকর্তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে অন্তসত্ত্বা হয়ে পড়ার মামলা করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে আইনগত সহায়তা দেয় চুয়াডাঙ্গার মানবতা ফাউন্ডেশন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের পদ্মবিলা ইউনিয়নের হায়দারপুর গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে চম্পাকে শিশুকাল থেকে জেলা সদরের কুতুবপুর ইউনিয়নের জীবনা গ্রামের মণ্টু মিয়ার বাড়িতে গৃহপরিচারিকা হিসেবে রাখা হয়। গত অক্টোবরের শেষভাগে দু মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। মানবতা ফাউন্ডেশনে আবেদন করে আইনগত সহায়তা চায়। পরবর্তীতে চম্পাকে তার বাড়ি থেকে জীবনায় তুলে নেয়া হয় বলে অভিযোগ তুলে বলা হয় গর্ভপাত ঘটানোর ওষুধ সেবন করায় ওরা। হাসপাতালে ভর্তিও করা হয়। গর্ভপাত ঘটে বলে জানানো হয়। মামলা করা হয়। মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন সদর থানার ওসি। ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য গত ২১ ডিসেম্বর সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালের আরএমও ডা. শামীম কবির ও গাইনি কনসালটেন্ট ডা. আকলিমা খাতুনকে নিয়ে গঠিত দু’সদস্যের মেডিকেল বোর্ড পরীক্ষা করে। ধর্ষণ দূরের কথা কুমারীত্বই অক্ষুন্ন থাকার বিষয়টি জানার পর কেনো ওই মামলা? এ প্রশ্ন তুলতেই চম্পা স্বীকার করে জমি ও টাকা আদায়ের জন্য ষড়যন্ত্রের কথা। তার সহযোগিদের নামধামও বলে। বিষয়টি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পেলে অন্য কোথাও মেডিকেল করানোর আবেদন করা হতে পারে বলে খবর রটে। এরই এক পর্যায়ে গত ২৯ ডিসেম্বর আবারও চম্পাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। রক্তের নমুনা নিয়ে বেটা এইচসিজি পরীক্ষা করানো হয়। এ পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার মেডিকেল বোর্ড মামলার তদন্তকারী কর্মকতা বরাবর প্রতিবেদন পেশ করেন। যাতে চম্পার অন্তঃসত্ত্বা বা ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে গত ২১ ডিসেম্বর মেডিকেল করানোর পর কুমারীত্ব অক্ষুন্ন থাকার খবর প্রকাশ পাওয়ায় এবং চম্পার স্বীকারোক্তি দেয়ার প্রেক্ষিতে পত্র পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। একটি পত্রিকা মানবতা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাড. মানি খন্দকারের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে মর্মে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ প্রতিবেদনে মানবতা ফাউন্ডেশন ও নির্বাহী পরিচালকের মানহানী হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে ওই পত্রিকাটির সম্পাদক, প্রধান সম্পাদক, বার্তা সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত বিবাদীদের বিরুদ্ধে সমন দিয়ে ধার্যকৃত দিনে আদালতে হাজির হওয়ার আদেশ দিয়েছেন।