বেগমপুর প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে কর্মসৃজন প্রকল্পে (৪০ দিনের কর্মসূচি) ৪ সপ্তাহের কাজ করেও টাকা পায়নি শ্রমিকরা। কাজ করে টাকা না পাওয়ায় মানবতের জীবন যাপন করছে শ্রমিকরা। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণেই তাদের মজুরির টাকা পায়নি এমনি অভিযোগ শ্রমিকদের?
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে গত ১২ ডিসেম্বর কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এ কর্মসূচির আওতায় উপজেলার প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক ২শ টাকা হাজিরায় কাজ করার সুযোগ পায়। আর এ কাজের টাকা স্ব-স্ব শ্রমিক নিজের একাউন্ট থেকে উত্তোলন করে থাকে। সে মোতাবেক বিভিন্ন ইউনিয়নের শ্রমিকরা ১০ টাকার একাউন্ট খোলে নিজ এলাকার ব্যাংক শাখায়। অনেক শ্রমিক অভিযোগ করে জানায়, গত ৪ সপ্তাহ কাজ করলেও আমলাতান্ত্রিক কারণে এখন পর্যন্ত কাজের মুজরি পায়নি। আগামী সপ্তাহেও টাকা পাবে কি না তাও অনিশ্চিত।
উল্লেখ্য, অতি দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করার জন্য সরকার এই কর্মসূচি তৈরি করেছেন। এই কর্মসূচির মাধ্যমে হতদরিদ্র মানুষ ৪০ দিনের কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকে। সাধারণত কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগের পর এই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। এর ফলে দরিদ্র মানুষের অনেক উপকার হয়। কাজ করার ফলে এসব মানুষেরা আবার নতুন করে জীবন শুরু করতে পারে। এই কর্মসংস্থান তাদের আর্থিকভাবে কিছুটা স্বচ্ছল করে তোলে। আর এ কাজ সরকারি ছুটির দিন বাদে সাপ্তহে ৫দিন হয়ে থাকে। তাই মন্ত্রণালয়/প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় হতে উপজেলায় বরাদ্দ প্রাপ্তির পর ইউএনও কর্তৃক জনসংখ্যা ও আয়তনের ভিত্তিতে ইউনিয়নওয়ারী বরাদ্দ বিভাজনপূর্বক ইউনিয়ন পরিষদে প্রেরণ করা হয়। ইউপি কর্তৃক বরাদ্দ অনুযায়ী শ্রমিক এবং ওয়েজ ও নন-ওয়েজ কর্মের প্রকল্প তালিকা প্রস্তুত করে উপজেলা কমিটিতে প্রেরণ করা হয়। জেলা কর্ণধার কমিটির চূড়ান্ত অনুমোদনের পর শ্রমিকদের জব কার্ড এবং প্রকল্পের সাইনবোর্ড প্রস্তুত করা হয়। মন্ত্রণালয়/প্রকল্প পরিচালক কর্তৃক প্রদত্ত বরাদ্দের আলোকে বিল প্রস্তুত করে সংশ্লি¬ষ্ট ব্যাংক একাউন্টে (মাদার অ্যাকাউন্ট) অর্থ জমা করা হয়। শ্রমিক তালিকা অনুযায়ী ইউনিয়নওয়ারী শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধের জন্য ব্যাংকের শাখা নির্বাচন করে প্রত্যেক শ্রমিকের নামে ব্যাংক হিসাব খোলা হয় এবং মাদার অ্যাকাউন্ট হতে নির্ধারিত ব্যাংকের শাখায় (চাইল্ড অ্যাকাউন্ট) টাকা স্থানান্তর করা হয়। প্রকল্প তদারকির জন্য উপজেলা কর্মকর্তাদের ইউনিয়নওয়ারী ট্যাগ অফিসার হিসেবে নিয়োগ করে প্রকল্পস্থলে সাইনবোর্ড স্থাপনপূর্বক প্রকল্পের কাজ আরম্ভ করা হয়। নন-ওয়েজ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে সংশ্লি¬ষ্ট পিআইসি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। ওয়েজকস্টের (টাকা) জন্য প্রতি সপ্তাহে ফিল্ড সুপারভাইজার ও ট্যাগ অফিসারের প্রত্যয়নের ভিত্তিতে অগ্রগতি অনুযায়ী শ্রমিক মজুরি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। এদিকে দীর্ঘদিন থেকে সদর উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা না থাকায় স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে আসছে। একজন কর্মকর্তা দিয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা এবং সদর উপজেলার কাজ হয়ে থাকে। ফলে অনেককেই ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অপরদিকে কাজ করা অনেক শ্রমিকের এনজিও কিস্তি আছে। সাপ্তাহিক এনজিও কিস্তির টাকা দিতে না পেরে মানসিকভাবে অশান্তিতে আছে।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াশীমুল বারী বলেন, শ্রমিকদের টাকার চেক ব্যাংকে পৌঁছে গেছে। আশাকরি শ্রমিকরা তাদের মজুরি পেয়ে যাবে।
তিতুদহ ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেন বলেন, বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট হয়েছে। তাই জটিলতা দেখা দিয়েছে। আশাকরি আগামী সপ্তাহে শ্রমিকরা তাদের মজুরি পেয়ে যাবে। এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) হাজি মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমাধানপূর্বক যাতে শ্রমিকরা তাদের মুজরি দ্রুত পেতে পারে তার সু-ব্যবস্থা করতে মর্জি হয়।