চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সাড়ে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড : তীব্র শীতে জনজীবন স্থবির

শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশু রোগীর ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে : চিকিৎসাধীন আলমডাঙ্গা এলাকার এক শিশুর মৃত্যু
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহমান শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে অসহনীয় শীত অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রা নেমে এসেছে সাড়ে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গতকাল দেশের এ সর্বনিম্নতাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়। তীব্র শীতে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে শীতজনিত নানা রোগের প্রাদূর্ভাব বেড়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক শিশু গতকাল মারা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। শীতের কাপুনি থেকে রক্ষা পেতে হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যদের গতরাতেও অনেক রাত পর্যন্ত খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে তার পাশে বসে উষ্ণতা নিতে দেখা গেছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মরসুমি লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। শ্রীমঙ্গল অঞ্চলসহ রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে ও সংলগ্ন এলাকায় বিস্তার লাভ করতে পারে। সারাদেশে রাতের এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বর্ধিত পাঁচদিনের আবহাওয়ার অবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবতর্ন নেই।
মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহে চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। জরুরি কাজ না থাকলে তেমন কেউ বাইরে বের হচ্ছে না। সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। দুপুরে ঝলমলে রোদ থাকলেও শীতল বাতাসে ধরাচ্ছে কাপুনি। ফলে জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অধিদফতর দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করে। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গতকাল রেকর্ড করা হয় মোংলায় ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতেই অনুমান করা যায়, প্রাণীকূলকে কতোটা শীতে কাপতে হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র বলেছে, চলতি শীত মরসুমে এখনও পর্যন্ত সাড়ে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড। অপরদিকে তীব্র শীতে হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যদের চরম দুর্ভোগ পোয়াতে হচ্ছে। সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতার প্রায় তিনগুণ শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। চিকিৎসাধীন আলমডাঙ্গার বাবু নামে এক শিশু মারা গেছে। ঘনকুয়াশার কারণে যানবাহন চলাচল দারুণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। বেলা সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করেছে। শহরতলীর দৌলাতদিয়াড় এলাকার দরিদ্র মানুষেরা জানান, শীতবস্ত্রের অভাবে তারা কষ্ট পাচ্ছেন। শীতবস্ত্র পেলে তারা উপকৃত হতো। এলাকার জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন বিষয়টি নজর দেবেন বলে এলাকাবাসীরা দাবি করেছেন। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়সূত্রে জানা গেছে, চলতি শীত মরসুমে শীতার্ত মানুষের জন্য বিতরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৮ হাজার ৯১৩ টি কম্বল পাওয়া গেছে। যার বেশিরভাগই ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। তবে, চাহিদার তুলনায শীতবস্ত্র অপ্রতুল হওয়ায় বেসরকারি পর্যায়ে শীতবস্ত্র বিতরণের কথা জানিয়েছেন শীতার্তরা।
আবহাওয়া অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামাদুল ইসলাম জানান, চলতি মরসুমে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এবছরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শামীম কবির জানান,‘ শীত থেকে রক্ষা পেতে শিশুদের গরম জামা কাপড় ও ন্যাপকিন পড়াতে হবে। শীত থেকে দূরে রাখতে হবে। বৃষ্টি হলে ডায়ারিয়া ও নিমোনিয়া হতো। যেহেতু বৃষ্টি নেই, শীতজনিত কারণে শিশুদের কষ্ট হচ্ছে। তবে, হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ আছে যেকোনো ধরনের সমস্যা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগ প্রস্তত রয়েছে।’
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গরিব ও দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে কম্বল বিতরণ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাহাত মান্নান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী খালেদুর রহমান অরুন, প্রেসক্লাব সভাপতি খন্দকার শাহ আলম মন্টু, প্রকল্প বাস্তবায়ন সহকারী আব্দুল লতিফসহ কর্মচারীবৃন্দ। এছাড়াও উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাহাত মান্নানসহ কর্মকর্তাবৃন্দ দাসপাড়া, ক্যানেলপাড়াসহ পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেছেন।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, হাঁড় কাঁপানো শীতের কাঁপুনিতে কাঁপছে জীবননগরবাসী। গত ২ দিন ধরে শৈত্যপ্রবাহের কারণে শুরু হয়েছে হাড়কাঁপানো তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশা। গত দুই দিনে দেখা মেলেনি সূর্যের। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ম তাপমাত্রা ৬ঃ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে এ জেলায়। তীব্র শীতের কারণে উপজেলায় কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসনালীর প্রদাহ ও সর্দি-জ্বরসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশু-পাখির মাঝেও এসব রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। শীতের তীব্রতার কারণে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে হতদরিদ্র খেটে খাওয়া দিনমজুর। প্রচণ্ড শীতে শীতবস্ত্রের অভাবে ঘর থেকে বের হতে না পারায় খেটে খাওয়া দিনমজুর ও ছিন্নমূল মানুষ মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। ছিন্নমূল এ সকল মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। ঘন কুয়াশার কারণে জেলার প্রধান সড়কগুলোতে যানবাহন দিনেরবেলায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে।