স্টাফ রিপোর্টার; নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্তির দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার পঞ্চম দিনের মতো আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন। আজ অনশনের ষষ্ঠ দিন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৯০ জন শিক্ষক-কর্মচারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা আমরণ অনশন পালন করেন। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের আয়োজনে এ কর্মসূচি চলছে। পাঁচ দিন টানা অবস্থান কর্মসূচি শেষে গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন।
আয়োজক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাশিদুল ইসলাম রাশেদ বলেন, অনশন কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত তাদের ৯০ জন শিক্ষক-কর্মচারী অসুস্থ হয়ে ঢামেকে ভর্তি আছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না। মো. আমিনুল ইসলাম নামে আরেক শিক্ষক নেতা বলেন, প্রচণ্ড শীতে তারা না খেয়ে এখানে রাত-দিন কাটাচ্ছেন। তারা কোনো অযৌক্তিক দাবি নিয়ে আসেননি। এটা তাদের বাঁচামরার লড়াই। এ লড়াইয়ে হেরে গেলে তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবনে অন্ধকার নেমে আসবে। তাই তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন কর্মসূচি থেকে সরবেন না।
আমরণ অনশন কর্মসূচি থেকে বিভিন্ন শিক্ষক নেতারা বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস তারা প্রত্যাখ্যান করেছেন। এর আগেও এমন আশ্বাস দেয়া হলেও কোনো কিছুই কার্যকর হয়নি। তাই তারা লিখিতভাবে দাবি আদায়ের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি থেকে সরবেন না। এ সময় তারা আরও বলেন, তারা দিনরাত কষ্ট করে দেশের আগামী ভবিষ্যত তৈরির কাজ করছেন। কিন্তু তাদের ভবিষ্যত অন্ধকার। তারা কীভাবে পরিবার নিয়ে জীবনযাপন করছেন তা কেউ জানেন না, আর জানতেও চান না। তাই তারা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছেন, দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত তা ছাড়বেন না।
এর আগে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার আশ্বাস দেন। এ সময় দাবি মেনে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু শিক্ষকরা ‘না’ ‘না’ স্লোগানে তা প্রত্যাখ্যান করেন। শিক্ষক নেতারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তারা বাড়ি ফিরে যাবেন না। এ বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে সরকারের সমালোচনা করেছেন মহাজোটের শরিক দলের একাধিক নেতা। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্দোলনরত শিক্ষকদের মাঝে উপস্থিত হয়ে বলেন, শিক্ষকদের দাবি উপেক্ষা করে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া সম্ভব নয়।তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংক, শিল্প ব্যাংকের অর্থ লুটপাট হয়েছে। ৪ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে ব্যাংক থেকে। এত টাকা চুরি হয় আর শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি বাবদ এক হাজার কোটি টাকা কেন ভর্তুকি দেবে না সরকার? তিনি বলেন, শিক্ষকরা জাতি গঠনে কাজ করে যান। তাদের কথা অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী বিবেচনা করবেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা শিক্ষামন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন, শিক্ষকদের দাবি যৌক্তিক। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য শিক্ষক বা সমাজের জন্য শোভনীয় নয়। শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই শিক্ষকদের দাবি পুনরায় বিবেচনা করুন।
এছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে একটা অনুষ্ঠানে এসে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন শিক্ষকদের দাবি যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন। শিক্ষকদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ২১ দফা কর্মসূচি ঘোষণাও করেন তিনি।