এবার বিপাকে ৭ কলেজের প্রথম বর্ষের ভর্তিচ্ছুরা

স্টাফ রিপোর্টার: ২০১৭ সালজুড়ে আলোচনায় থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নতুন বছরও নানা ভোগান্তির মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। গত বছর তারা পরীক্ষা গ্রহণ, ফল প্রকাশ-সংক্রান্ত নানা হয়রানিতে পড়লেও এবার প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সামনে হাজির হয়েছে ভিন্ন সমস্যা। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশেরই কলেজ ও সাবজেক্ট চয়েজে নাম আসেনি। সমস্যার সমাধানে শিক্ষার্থীদের স্ব স্ব অনুষদে যোগাযোগ করতে বলা হলেও সেখান থেকে কোনো সদুত্তর না পাওয়ায় আদৌ তারা ভর্তি হতে পারবেন কিনা, সেটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে নানামুখী সংশয়-শঙ্কা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা, মানবিক ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অফিসে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য শিক্ষার্থী উৎকণ্ঠা নিয়ে সেখানে ঘোরাঘুরি করছেন। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা সবাই ভালো ফল নিয়ে পাস করলেও কলেজ ও সাবজেক্ট চয়েজে তাদের নাম আসেনি। সিরিয়ালে প্রথম দিকে থাকা শিক্ষার্থীরাও এই বিড়ম্বনা থেকে বাদ যাননি।

এ বিষয়ে অনুষদ থেকে কি জানানো হয়েছে জানতে চাইলে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, ফরম পূরণে কোনো সমস্যা হওয়ার কারণে এটি হতে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে তাদের এই আশ্বাসও দেয়া হয়েছে যে, এ ভুলের জন্য তাদের কোনো সমস্যা হবে না। তারাও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। তবে বাণিজ্য অনুষদ থেকে শিক্ষার্থীদের জানানো হয়েছে, সার্ভারের সমস্যার কারণে এটি হয়ে থাকতে পারে। খুব শিগগিরই সমস্যার সমাধান করা হবে। কিন্তু মানবিক বিভাগ থেকে এ বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দেয়া হয়নি। বরং যাদের নাম এসেছে, তাদের সাক্ষাৎকার শেষ হলে যাদের নাম আসেনি তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে শিক্ষার্থীরা জানতে পেরেছেন। ফলে উত্তীর্ণ তালিকার প্রথম দিকে থেকেও তারা আদৌ কলেজ বা সাবজেক্ট পাবেন কিনা, তা নিয়ে তারা রয়েছেন পুরোপুরি অন্ধকারে।

মানবিক বিভাগের একজন শিক্ষার্থী শিশির চন্দ্র পণ্ডিত পরীক্ষায় ৪৩তম স্থান অধিকার করেছেন। প্রতিটি বিষয়ে স্কোরও অনেক ভালো। এরপরও শিশির চন্দ্র পণ্ডিত কোনো কলেজ বা সাবজেক্ট পাননি। তার ফরম থেকে দেখা যায়, সেখানে লেখা ‘আপনি কোনো কলেজ এবং বিষয়ের জন্য মনোনীত হননি’। শুধুমাত্র শিশিরই নয়, এ ধরনের সমস্যা নিয়ে প্রতিদিনই শত শত শিক্ষার্থী এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফিসে ঘুরপাক খাচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অনেক সময় সাবজেক্টভিত্তিক শর্ত থাকায় এ ধরনের সমস্যা হয়। কিন্তু সাত কলেজে সাবজেক্ট বা অন্য কোনো বিষয়ে কোনো শর্ত আরোপ করা হয়নি। বরং সিরিয়াল অনুযায়ী যার যে কলেজ ও বিষয় আসবে, তাকে সেই কলেজ ও বিষয়ে ভর্তি করা হবে বলে আগেই জানানো হয়েছে। এরপরও এমন ফলাফল কেনো আসছে, সেটা নিয়ে কোনো সদুত্তর নেই কর্তৃপক্ষের কাছেও।

এদিকে ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজে চান্স পাওয়ায় তাদের অনেকেই অন্য কোথাও ভর্তি হয়নি। আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভর্তি হয়েছিলো, তাদের একটি অংশ এরই মধ্যে অধিভুক্ত কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য সেখানকার ভর্তি বাতিল করে কাগজপত্র তুলে এনেছে। এ অবস্থায় গত ২৯ তারিখে কলেজ ও সাবজেক্ট চয়েজের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর বিপাকে পড়েছেন অনেকেই।

এ বিষয়ে শিশির চন্দ্র পণ্ডিতের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু বুঝতে পারছি না। এখনো কিছু জানতে পারিনি। তবে শুনেছি আমরাও ভর্তি হতে পারবে।’

বাণিজ্য বিভাগের একজন শিক্ষার্থী মো. আসাদ। পরীক্ষায় তার সিরিয়াল ২৫৬৬। এখানে মোট আসন রয়েছে প্রায় সাড়ে আট হাজার। ফলে কলেজ বা সাবজেক্ট না পাওয়ার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না আসাদ। কলা অনুষদ থেকে জানানো হয়েছে যারা বিজ্ঞান ও বাণিজ্য অনুষদ থেকে মানবিকে আসতে চান, তাদের জন্য ৮ তারিখের পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কিন্তু আসাদ এসএসসি ও এইচএসসিতে বাণিজ্য বিভাগ থেকে পড়াশোনা করে বাণিজ্য বিভাগেই ভর্তি পরীক্ষা দেয়। ফলে তার এ ধরনের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয় বলে জানান আসাদ। শুধু আসাদ বা শিশিরই নয়, শত শত শিক্ষার্থী ২৯ ডিসেম্বর কলেজ ও সাবজেক্ট চয়েজের ফল প্রকাশের পর থেকে এমন অনিশ্চিত অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় পার করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের ডিন আবু মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘হয়তো শিক্ষার্থীরা তাদের যে যোগ্যতা সে অনুসারে কলেজ ও সাবজেক্ট চয়েজ দেয়নি। ফলে তারা মনোনীত হয়নি। ‘কিন্তু সিরিয়ালের একেবারে প্রথম দিকে থাকা শিক্ষার্থী এবং সব কলেজ ও সাবজেক্টের চয়েজ প্রদানকারীরাও মনোনীত হয়নি কেনো- এমন প্রশ্নের জবাবে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ ধরনের কিছু হয়ে থাকলে তাদের বিষয়ে প্রথম ধাপের সাক্ষাৎকার শেষে সিট ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে অনেকেই সিরিয়ালের প্রথমে থেকেও সাবজেক্ট ও পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবে না।

তবে এ বিষয়ে ভিন্ন কথা জানান বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল আজীজ। তিনি বলেন, কোনো কারণে যদি ভুল ফলাফল যেয়ে থাকে, এরপরও তারা তাদের যোগ্যতা অনুসারে কলেজ ও সাবজেক্ট পাবে। বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য অনুষদের ডিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। কিন্তু অনুষদটি থেকে জানানো হয়েছে, এ বিষয়ে কোনো ভুল হয়ে থাকলে তারা অচিরেই সেটা সংশোধন করবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান অনুষদসহ তিন ইউনিটে ৩২ হাজার আসনের বিপরীতে ৭০ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৪৪ হাজার শিক্ষার্থী।

উল্লেখ্য, গত ১ ডিসেম্বর কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের, ৮ ডিসেম্বর বিজ্ঞান ইউনিটের এবং ৯ ডিসেম্বর বাণিজ্য ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আর গত ১১ ডিসেম্বর একযোগে তিন অনুষদের ফল প্রকাশিত হয়। এরপর ২৯ ডিসেম্বর কলেজ ও সাবজেক্ট চয়েজের ফলাফল প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।