শিক্ষা ও শিক্ষাপোকরণের মানকেও গুরুত্ব দিতে হবে

বছরের প্রথমদিন সোমবার দেশের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের চোখে ছিলো আনন্দের ঝিলিক, নতুন বই হাতে পাওয়ার অনাবিল এক উচ্ছ্বাস। ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে ৪ কোটি ৩৭ লাখ ৬ হাজার ৮৯৫ জন শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ১৬২টি বই তুলে দেয়া হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে সরকারি বিনামূল্যের এসব বইয়ের ছাপা ও তথ্য বিভ্রাট সংক্রান্ত সমালোচনার মুখে পড়েছে সংশ্লিষ্টরা। তবে এবারের বইগুলো ভালোমানের কাগজে ছাপা হয়েছে। বইগুলো আকর্ষণীয় ও রঙিন। এ ছাড়া নবম-দশম শ্রেণির ১২ সুখপাঠ্য বই দামি কাগজে রঙিন ছবিসহ ছাপা হয়েছে বলে দাবি করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। ২০১৭ সাল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দৃষ্টি প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থীদের ব্রেইল বই, ৫টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের তাদের নিজেদের ভাষায় লেখা প্রাক-প্রাথমিকের বই ও শিক্ষা উপকরণ এবং শিক্ষকদের শিক্ষক নির্দেশিকাও বিতরণ শুরু হয়। এবারও তার ব্যত্যয় হয়নি। নববর্ষে বই বিতরণ ঘিরে যে উৎসব তা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক বাড়তি মাত্রা যুক্ত করে সত্যি। আবার এ উৎসব শুধু দেশেই নয়,বিশ্বের বৃহৎ কর্মসূচির মধ্যেও অন্যতম।

বিনামূল্যের বই কালোবাজারে বিক্রি, বইয়ের সাথে নোটবই কিনতে অভিভাবকদের বাধ্য করার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে অতীতে। অন্যদিকে পাঠ্যপুস্তকের মান নিয়েও সংশয় ছিলো। এসব যাতে না ঘটে সেদিকে সংশ্লিষ্টরা সতর্ক থাকবে। গত বছরও শিক্ষায় সফলতা এসেছে আমাদের। শিক্ষা যে দারিদ্র্যমুক্তির কার্যকর অস্ত্র তা প্রমাণিত হয়েছে শিক্ষা বিস্তরের সাথে পাল্লা দিয়ে দারিদ্র্য নিরসনের মধ্যদিয়ে। বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণসহ শিক্ষা খাতে বাজেটের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ জাতির জন্য সত্যিকার অর্থেই লাভজনক এ কথা লেখাও বাহুল্য নয়। শিক্ষা খাতে এটি সরকারের ‘অন্যতম অর্জন’, বলা যায় সংশয়হীনভাবে।

বিনামূল্যের বই শিক্ষার্থী ঝরেপড়া রোধেও সহায়ক হয়েছে। সরকার যে শিক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে, সরকারের শিক্ষাসংক্রান্ত নানামুখী কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়েই তা প্রতিফলিত। সরকারের এ মহৎ উদ্যোগের পূর্ণাঙ্গ সফলতার জন্য শিক্ষা এবং শিক্ষা উপকরণের মানের দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। আবার এটাও ঠিক যে, বিনামূল্যে বই বিতরণ সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ দক্ষভাবে মোকাবেলা করতে হলে প্রতিটি স্তরেই সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। শিক্ষার্থীদের হাতে শিক্ষা উপকরণ পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষা হতে হবে যুগোপযোগী, আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত। শিক্ষার মান নিশ্চিত বড় চ্যালেঞ্জ হলেও এ চ্যালেঞ্জ দক্ষতার সাথেই মোকাবেলা করতে হবে। এছাড়া নৈতিকতাবোধসম্পন্ন শিক্ষার্থী তৈরি করতে গুরুত্ব দিতে হবে পারিবারিকভাবেও।