অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার : নির্যাতনকারী দুজন গ্রেফতার

আলমডাঙ্গা জুগিরহুদা গ্রামের নির্যাতনের শিকার চম্পাদের পাশে দাঁড়িয়েছে উপজেলা প্রশাসন

স্টাফ রিপোর্টার: আলমডাঙ্গার জুগিরহুদা গ্রামের নির্যাতনের শিকার মা-মেয়ের পাশে দাঁড়িয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দাখিল করেছেন নির্যাতনের শিকার চম্পা খাতুন। এর পরপরই অভিযুক্ত শাহীন ও রুবেলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত শাহীন ও রুবেল একই গ্রামের ফকির বিশ্বাসের ছেলে। আজ তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। এদিকে চম্পার মেয়ে স্কুলছাত্রী স্মৃতির স্কুলে যাওয়া আসায় কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, খাদিমপুর ইউনিয়নের জুগিরহুদা গ্রামের ফকির বিশ্বাসের মেয়ে চম্পা খাতুন তিন কন্যা সন্তানের জননী। স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে বছর দুয়েক আগে তিনি দুই মেয়ে সুরভী আক্তার স্মৃতি ও সুবর্ণা আক্তারকে নিয়ে বাপের ভিটেয় আশ্রয় নেন। পরে স্বামী তাকে তালাক দেন। সেই থেকে চম্পা খাতুন টিনের ছোট্ট একটি ছাপড়া বানিয়ে বাপের বাড়িতে বসবাস করছেন দুই মেয়ে নিয়ে। মেয়ে স্মৃতি এবার জেহালার সৃজনী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠ থেকে জেএসসি পাস করে। ১ জানুয়ারি সে নুতন বই নেয়ার জন্য স্কুলের বই উৎসবে যাওয়ার জন্য বের হয়। এ সময় তার মামা-মামিরা ধরে বেদম মারপিট করেন। তার মা চম্পা মেয়েকে উদ্ধার করতে গেলে তাকেও নির্যাতন করে হামলাকারীরা। এ ঘটনার পর প্রতিবেশী হেলালুল ইসলাম হেলালের বাড়িতে আশ্রয় নেয় তারা। পুনরায় মারধরের ভয়ে বই উৎসবে যেতে পারে না স্মৃতি। স্মৃতির মা চম্পা খাতুন জানান, পিতার ভিটা থেকে উচ্ছেদ করার জন্যই ভাই-ভাবীরা তাদের ওপর এমন নির্যাতন করছে। মেয়ে স্মৃতিকে জোরপূর্বক বিয়ে দিতে চায় তারা। এজন্য স্কুলে যেতে বাধা দিচ্ছে তারা। বাধ্য হয়ে প্রশাসনের শরণাপন্ন হয়েছি।
এদিকে এ সংক্রান্ত একটি খবর গতকাল মঙ্গলবার দৈনিক মাথাভাঙ্গায় প্রকাশের পর আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সকালেই তার প্রতিনিধিকে জুগিরহুদা গ্রামে পাঠিয়ে খোঁজখবর নেন। এতে তিনি ঘটনার সত্যতা পান। দুপুরে তার দফতরে দুই মেয়েকে সাথে নিয়ে হাজির হয় চম্পা খাতুন। এ সময় স্কুলছাত্রী সুরভী আক্তার স্মৃতি মামা-মামিদের নির্যাতনের বর্ণনা দেয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাহাত মান্নান ঘটনার বর্ণনা শুনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে আলমডাঙ্গা থানাকে নির্দেশ দেন। তিনি জানান, উপজেলা প্রশাসন স্মৃতিদের পাশে আছে। স্মৃতির স্কুলে যাওয়া আসা নির্বিঘœ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষে স্মৃতির সাথে উপস্থিত ছিলেন আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি খন্দকার শাহ আলম মন্টু। পরে চম্পা খাতুন থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে লিখিত আকারে এজাহার দাখিল করেন। গতকালই আলমডাঙ্গা থানার এসআই আফজাল হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে প্রধান দুই অভিযুক্ত শাহীন ও রুবেলকে জুগিরহুদা থেকে গ্রেফতার করেন। এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা থানার আবু জিহাদ মাথাভাঙ্গাকে জানান, অভিযুক্ত মামা-মামি কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
অন্যদিকে শাহীন ও রুবেল গ্রেফতারের পর বাকি অভিযুক্তদের তীব্র রোষানলে পড়েছেন চম্পা, চম্পার দুই মেয়ে ও আশ্রয়দাতা হেলাল। অভিযুক্তরা অশ্লীলভাবে গালাগালি করছে ও দেখে নেয়ার হুমকি দিচ্ছে। চম্পা খাতুন জানান, বাকি অভিযুক্তরা আটক না হওয়া পর্যন্ত আমরা পুরোপুরি নিরাপদ হতে পারছি না।