জঙ্গি দমনে সাহসিকতা : পিপিএম পাচ্ছেন চুয়াডাঙ্গার ছেলে বিপুল

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার কৃতিসন্তান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ বিপুল জঙ্গি দমনে সাহসি অবদানের জন্য সোয়াট কমান্ডার হিসেবে প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন। সালে জঙ্গি দমনে চট্টগ্রামে যে কয়টি অভিযান হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় অভিযান ছিলো সীতাকু-ে। ১৫ মার্চ সীতাকু-ু পৌরসভার দক্ষিণ মহাদেবপুর এলাকায় একটি জঙ্গি আস্তানায় ‘অপারেশন অ্যাসল্ট-১৬’ পরিচালনা করে পুলিশ, যার মূল নেতৃত্বে ছিলো স্পেশাল উইপন্স অ্যান্ড ট্যাকটিক্স (সোয়াট) টিম। ২০ ঘণ্টার এ অভিযানে ২০ জনকে জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করা হয়। এছাড়া আত্মঘাতি চার জঙ্গিসহ ৫জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। অভিযানে সোয়াট টিমের চট্টগ্রামের কমান্ডার সিএমপির গোয়েন্দা ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মির্জা সায়েম মাহমুদ দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। জঙ্গি দমনে এ সাহসিকতার স্বীকৃতি এবার পাচ্ছেন মির্জা সায়েম মাহমুদ। চট্টগ্রামের এ সোয়াট কমান্ডার সাহসিতকায় পিপিএম’র জন্য মনোনীত হয়েছেন। একই সাথে চট্টগ্রামের সোয়াট টিমের সদস্য এটিএসআই জিহাদ হোসেনও পিপিএম’র জন্য মনোনীত হয়েছেন। ৮ জানুয়ারি পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত প্যারেডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিপিএম ব্যাজ পরিয়ে দেবেন। সদ্যসমাপ্ত এ বছরে মির্জা সায়েম মাহমুদের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের সোয়াট টিমের সদস্যরা আরও কয়েকটি জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন। ৭ মার্চ কুমিল্লার চান্দিনায় একটি চেকপোস্টে বাস তল্লাশির সময় পুলিশের ওপর হামলার পর সন্দেহভাজন দুই জঙ্গিকে আটক করে পুলিশ। আটক দুজন হল- জসিম (৩০) ও হাসান (৩২)। এদের মধ্যে ১জন পুলিশের শটগানের গুলিতে আহত হয়েছিলো। আরেকজনকে বোমা নিয়ে ধানক্ষেত দিয়ে পালানোর সময় আটক করে পুলিশ। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৮ মার্চ চট্টগ্রামের মিরসরাই পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের গোবানিয়া এলাকায় রিদওয়ান মঞ্জিলে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা। এ অভিযানেও ছিলেন সোয়াট টিমের সদস্যরা। ওই আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ হ্যান্ড গ্রেনেড উদ্ধার হয়।
এরপর ২৯ মার্চ কুমিল্লা শহরের কোটবাড়ি এলাকায় আরও একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শুরু করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট যার সাথেও ছিলো সোয়াট টিমের সদস্যরা। জীবন বাজি রেখে প্রতিটি অভিযানে সোয়াট টিমের সদস্যরা অংশ নেন যার স্বীকৃতি মিলেছে পিপিএম পদকপ্রাপ্তির মাধ্যমে, এমনটাই মনে করছেন মির্জা সায়েম মাহমুদ। ‘জঙ্গিবাদ, উগ্রপন্থা দমনে সোয়াট টিমের সদস্যরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। চট্টগ্রামে জঙ্গিদের যে কোনো কর্মকা- মোকাবেলায় আমরা সবসময় সতর্ক আছি। চট্টগ্রামে কমান্ডার হিসেবে আমাকে পিপিএম দেয়া হচ্ছে। মির্জা সায়েম বলেন, আমি মনে করি এ প্রাপ্তি চট্টগ্রামের সোয়াট টিমের সকল সদস্যের। চুয়াডাঙ্গার কৃতিসন্তান মির্জা সায়েম মাহমুদ সোয়াট টিমের কমান্ডার হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ-এমবিএ সম্পন্ন করা মির্জা সায়েম ২০০৮ সালে ২৭তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশে যোগ দেন। তিনি চুয়াডাঙ্গা কোর্টপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত আব্দুল হক মির্জা ও প্রয়াত শিক্ষিকা আমেনা হকের ছেলে। মির্জা সায়েম মাহমুদ বিপুল ৩ ভাই বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। চুয়াডাঙ্গার প্রদীপন বিদ্যাপীঠ, ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। বিবিএ ও এমবিএ’র পর বিসিএস (পুলিশ) দিয়ে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনে পিপিএম পদকে ভূষিত হচ্ছেন খবরে চুয়াডাঙ্গায় পরিচিতজনদের মাঝে উৎসবের আমেজ ফুটে ওঠে।