মধু বিক্রেতার ছদ্মবেশে জঙ্গি সাঈদ

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে সিরিজ বোমা হামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও কলকাতার মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি জঙ্গি নেতা শ্যামল শেখকে (৩৩) অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে বগুড়া পুলিশ। মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি হিসেবে তার বিরুদ্ধে কোলকাতার এনআইএ (ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি) ১০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেছে। ২০১৫ সালে ১৭ আগস্ট বাংলাদেশে সিরিজ বোমা হামলায় আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। গতকাল শনিবার দুপুরে বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান তার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নব্য জেএমবি নেতা শ্যামল শেখ ওরফে আবু সাঈদকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জেএমবির ওই নেতার পরিচয় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের নথিতে শ্যামল শেখ হিসেবে লেখা রয়েছে। তিনি আবু সাঈদ ওরফে আবদুল করিম ওরফে তৈয়ব ওরফে তালহা শেখ ওরফে হোসাইন ওরফে সাজিদ ওরফে ডেঞ্জার সাকিল ওরফে মোকলেছ ওরফে শফিক নামেও পরিচিত।

গত শুক্রবার রাত ১টায় বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ওমরপুরহাট এলাকায় বগুড়া-নাটোর মহাসড়ক থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। রাজশাহী থেকে মোটরসাইকেলে বগুড়ায় আসার পথে পুলিশ সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও বগুড়া পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। কোলকাতা থেকে পালিয়ে আসার দুই বছরের মাথায় গ্রেফতার হলেন তিনি। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি নাইন এমএম পিস্তল, ম্যাগাজিন, গুলি, বার্মিজ চাকু ও নম্বরবিহীন মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।

আবু সাঈদের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চরচাঁদপুর গ্রামে। তার হাত ধরে নব্য জেএমবি নেতা সোহেল মাহফুজসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন বলে পুলিশ দাবি করেছে। বিকেলে শ্যামল শেখকে বগুড়ার জ্যেষ্ঠ সহকারী বিচারিক হাকিম আবু রায়হানের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন, জঙ্গি নেতাকে গ্রেফতারের আগে গত অক্টোবরে তার স্ত্রী ও ভারতীয় নাগরিক খাদিজা বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর থেকে আবু সাঈদকে ধরতে গোয়েন্দা দল মাঠে নামে। ২০০২ সালে উত্তরাঞ্চলে জেএমবিতে অভিষেক হয় আবু সাঈদের। রাজশাহী অঞ্চলের সামরিক শাখার প্রধানের দায়িত্ব পেয়ে বাগমারা উপজেলার হামিরকুৎসা গ্রামে সর্বহারা নিধন অপারেশনে অংশ নেন। ২০০৫ সালে সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলা মামলার ঘটনায় নওগাঁর আদালতে বোমা হামলায় অংশ নেন তিনি।  আসাদুজ্জামান বলেন, বোমা হামলা মামলায় ২০০৭ সালে আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দিলে ভারতে আত্মগোপন করেন তিনি। ২০০৯ সালে ভারতের খাদিজা বেগমকে বিয়ে করেন। ২০১০ সাল থেকে শ্যামল শেখ পরিচয়ে ভারতের নদীয়া জেএমবির সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালে নদীয়া ছাড়াও বীরভূম ও বর্ধমান জেলায় দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালে ভারতের বর্ধমান জেলার খাগড়াগড় বোমা বিস্ফোরণে অংশ নেন। এ ঘটনায় বর্ধমান পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা করে এবং আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। ২০১৫ সালে আবু সাঈদ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ফের বাংলাদেশে এসে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। ২০১৭ সাল থেকে তিনি নব্য জেএমবির দক্ষিণাঞ্চলের প্রধানের দায়িত্ব পান।