প্রতিবারের মতো এবারও ঢাকাসহ সারাদেশে খ্রিস্টীয় বছর শেষের রাতকে উপভোগ্য করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং ক্লাবগুলোতে এ উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। তারকাখচিত হোটেলগুলোর পাশাপাশি ছোট পরিসরেও উদযাপন করা হবে থার্টি ফার্স্ট নাইট। হোটেল রেস্তোরাঁয় রকমারি খাবার দাবারেরও আয়োজন হবে। এসব আয়োজনকে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে নারী নিগ্রহসহ নানা উচ্ছৃঙ্খলতার মতো ঘটনাও অতীতে ঘটেছে। এবারও বর্ষ বিদায়ের রাতটিকে উদযাপন করতে নগরজুড়ে নেয়া হয়েছে নানা প্রস্তুতি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করেছে। নিকট অতীতে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা, শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে জঙ্গি, নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া, কল্যাণপুর, পল্লবী এবং আজিমপুরে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান, উত্তরার আশকোনায়, মিরপুরে জঙ্গি গ্রেফতার এবং সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, জঙ্গিদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনা পর্যালোচনা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই বিশেষ নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে আশকোনায় আত্মঘাতী নারী জঙ্গির অনুসন্ধান এবং রাজশাহীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে জঙ্গি ঘাঁটির বিষয়টি সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। সেই প্রেক্ষিতে প্রশাসনকে আরও ব্যাপক সতর্ক অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
বিগত বছরগুলোর মতো কম বেশি ২০১৭ সালেও ধারাবাহিকভাবে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, সহিংসতা, নৃশংসতা, নির্মমতা ও রক্তাক্ত ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে দেশবাসীকে। নানা ঘটন-অঘটন, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, চড়াই-উতরাই, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আনন্দ-বেদনার সাক্ষী হয়ে কালের গর্ভে সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে ২০১৭। আজ খ্রিস্টীয় এ বছরটির শেষ দিন। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় প্রেক্ষাপটে নানা কারণেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে বছরটি। বিদায়ী ২০১৭ সালটি সরকারের ধারাবাহিক দ্বিতীয় মেয়াদের চতুর্থবর্ষ পূর্তির বছর। রাজনীতির মাঠ তেমন উত্তপ্ত না হলেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিষ্ঠানে হামলাসহ নানা নৈরাজ্য, সহিংসতাকে কেন্দ্র করে এক দীর্ঘশ্বাস বয়ে গেছে বাঙালি জীবনে। প্রতিহিংসার, নাশকতার আগুনে সংখ্যালঘু ও প্রতিপক্ষের ঘরবাড়ি, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই হয়েছে। অবশ্য প্রতিবাদ, প্রতিরোধের মতো ঘটনাও ঘটেছে। তবে এতো সঙ্কটের মধ্যেও দেশ এগিয়েছে অনেক। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য হ্রাসসহ নানা ক্ষেত্রে এশিয়ার বহু দেশের শীর্ষে অবস্থান, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সাফল্য বিশ্ববাসীকে বিস্মিত করেছে।
রাত পোহালেই খ্রিস্টীয় নববর্ষ ২০১৮ সালের সূর্যোদয় হবে। নববর্ষের এ সূচনালগ্নে প্রত্যাশা জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে আত্মপ্রবঞ্চনা, অগণতান্ত্রিক ও পশ্চাৎমুখী প্রবণতার অবসান ঘটবে। জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূল ও যুদ্ধাপরাধীমুক্ত উন্নয়নশীল স্বদেশ গড়ে উঠবে। একই সাথে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সকল অপতৎপরতা বন্ধ হোক। ত্রাস-সন্ত্রাসের দিন যেন আর না আসে ফিরে। শক্ত হাতে এ প্রতিরোধ সবাইকে গড়ে তুলতে হবে। দেশ সেবায় আত্মনিয়োগের মধ্যদিয়েই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।