গাংনীতে ক্ষমতাসীন দু’পক্ষের মধ্যে টান টান উত্তেজনা

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা যুবলীগের বর্তমান আহবায়ক কমিটি ও সদ্য সাবেক কমিটির পাল্টাপাল্টি সভা নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার পরবর্তী করণীয় নিয়ে মতবিনিময় সভা ডাকেন। একই সময়ে নতুন কমিটির আহ্বায়ক পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম আনন্দ-সমাবেশ আয়োজনের ডাক দেন। এ নিয়ে জনমনে আতঙ্ক শুরু হয়। উভয় পক্ষের মধ্যে শুরু হয় টান টান উত্তেজনা। এর এক পর্যায়ে দুপুরের দিকে পৌর মেয়রের নেতৃত্বে গাংনী শহরের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বের হয়। নতুন কমিটিকে শুভেচ্ছা ও যুবলীগের পক্ষে স্লোগান দেন মোটরসাইকেল বহরের নেতাকর্মীরা। মিছিল শেষে মেয়র গাংনী হাসপাতাল বাজারে অবস্থান নেন। হাসপাতালের সামনে আবুল কালামের আজাদের দোকানে সাবেক মেয়র আহম্মেদ আলীর ব্যক্তিগত অফিসে যান। সেখান থেকে চেয়ার টেবিল বের করে দোকান মালিক কালামকে দোকানের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন।
দোকানের চেয়ার টেবিল বের করে দেয়ার বিষয়ে মেয়র বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার আমার নেতৃত্বে আনন্দ মিছিল হওয়ার কথা। মিছিল বানচাল করতে বুধবার রাতে এই অফিসে বসেই আহম্মেদ আলী, মজিরুল ইসলাম ও মোশাররফ হোসেন ষড়যন্ত্র করেছেন। আমি গোপন সূত্রে জানতে পেরেছি মিছিলে বোমা হামলার জন্য ১০ লাখ টাকা বাজেট করা হয়েছে।
এদিকে হাসপাতাল বাজার থেকে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে মেয়র পৌঁছান বাসস্ট্যান্ড জেলা পরিষদ মার্কেটে। সেখানে উপজেলা যুবলীগের কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেন। তবে কিছুক্ষণ তালা লাগানো থাকার পরে গাংনী থানার ওসির মধ্যস্থতায় তালা খুলে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে মেয়র আশরাফুল ইসলাম বলেন, টিআর-কাবিখার টাকা দিয়ে যুবলীগের নামে জেলা পরিষদ মার্কেটের চারটি দোকান নেয়া হয়েছিলো। যুবলীগের অফিস হবে এজন্য কম জামানত নিয়ে জেলা পরিষদ দোকান বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু যুবলীগের বিদায়ী সভাপতি মোশারফ হোসেন তার নিজ নামে দোকানগুলো চুক্তি করেছেন। যেহেতু এটি যুবলীগের নামে হওয়ার কথা তাই এখানে যুবলীগেরই অফিস করা হবে। কারও ব্যক্তিগত অফিস থাকবে না।
তবে অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে মোশাররফ হোসেন বলেন, গাংনীতে তো দলীয় কোনো বসার জায়গা (অফিস) নেই। তাই আমার ব্যক্তিগত দোকানে নেতাকর্মীদের বসতে দিই। আমি এখান থেকেই যুবলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। যুবলীগের নামে অফিস বরাদ্দ নেয়া হয়নি বা যুবলীগের নামে দোকান বরাদ্দ নেয়ার কোনো কথাও কারো সাথে হয়নি।
এদিকে বিকেলে পৌর মেয়রের বাসভবনের সামনে নেতাকর্মীরা আনন্দ সমাবেশের জন্য জড়ো হয়। অপরদিকে মোশাররফ হোসেন তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে কিছু নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রস্তুতিসভা করছিলেন। এতে স্বাভাবিকভাবেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তবে দুই অবস্থানের মাঝে বাধ সাধেন পুলিশ। গাংনী থানার ওসি হরেন্দ্র নাথ, ওসি (তদন্ত) কাফরুজ্জামানসহ পুলিশের শতাধিক সদস্য লাঠিসোঁটা নিয়ে জেলা পরিষদ মার্কেটসহ বাজারের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নেন। শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কর্মসূচি সম্পন্ন হয়।
গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হরেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, রাজনৈতিক দলের লোকজন তাদের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি অবনতি যাতে না হয় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। যেকোনো প্রকার অপ্রীতিকর অবস্থা মোকাবেলায় প্রস্তুত পুলিশ। উভয়পক্ষকে শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।