ক্ষমতা নয় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধই হোক লক্ষ্য

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হবে ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ফলে বছরজুড়ে রাজনীতি আবর্তিত হবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ যেমন চাইবে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় বসতে, তেমনই দীর্ঘকাল ধরে দেশশাসন করা অন্যতম বড় দল বিএনপিও চাইবে টানা দুই মেয়াদ ক্ষমতার বাইরে থাকার পর নতুন করে ক্ষমতার স্বাদ নিতে। এজন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-দু’দলের নেতৃত্বাধীন যথাক্রমে মহাজোট ও ২০দলীয় জোট রাজনৈতিক আক্রমণ, পাল্টা-আক্রমণ ও প্রচারণার উত্তাপে কাঁপাবে গোটা বছর। থাকবে হয়তো জোট ভাঙা-গড়ার হিসাব-নিকাশও। সবকিছু মিলিয়ে ২০১৮ সাল হতে যাচ্ছে রাজনৈতিক বহু ভাঙা-গড়ার খেলার বছর।
দুর্ভাগ্যজনক, আমাদের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল যেভাবে যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়া ও ক্ষমতা দখলে রাখার মরণপণ চেষ্টায় লিপ্ত, তেমনই ছোট দলগুলোও যে কোনোভাবে ক্ষমতার অংশীদার হতে চায়। অথচ রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে গণতান্ত্রিকভাবে নিজেদের আদর্শ দ্বারা জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে তাদের সেবার সুযোগ লাভের চেষ্টা করা। জনগণ সুযোগ দিলে প্রতিশ্রুতি মোতাবেক শাসন পরিচালনা ও তাদের চাওয়া-পাওয়াকে প্রাধান্য দেয়া। অন্যদিকে একবার সুযোগ না এলে বারবার চেষ্টা করে জনগণের সমর্থন লাভের চেষ্টা অব্যাহত রাখা। কিন্তু আমাদের গণতন্ত্র ও রাজনীতি এতদিনেও সেই গণতান্ত্রিক চেতনা অর্জন করতে পারেনি। এ অবস্থায় বর্তমানে রাজনীতিতে কিছুটা স্থিতিশীল পরিস্থিতির যে সুবাতাস বইছে, তাকে স্থায়িত্ব দান করার চেষ্টা করতে হবে সবাইকে।
নির্বাচনী রাজনীতির জন্য ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণে এরই মধ্যে নিজেদের কৌশলও ঠিক করে ফেলেছে বিএনপি-আওয়ামী লীগ। যেখানে ক্ষমতাসীন দলের কৌশল হতে যাচ্ছে সরকারের টানা দশ বছরের নানা উন্নয়ন-অর্জনের প্রচার ও বিএনপিকে চাপে রাখার চেষ্টা, সেখানে বিএনপির মনোভাব হচ্ছে ইতিবাচক রাজনীতি ও জনগণের কষ্ট হয় এমন কোনো কর্মসূচি না দিয়ে জনগণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা। সংঘাত-সংঘর্ষ, জ্বালাও-পোড়াও এবং হরতালের মতো গণবিরোধী কর্মসূচি পরিহার করে জনবান্ধব মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে বিএনপির বর্তমান কৌশল অব্যাহত রাখা উচিত। সরকার, জনসাধারণ, এমনকি শাসকদলেরও উচিত হবে এমন পদক্ষেপকে উৎসাহিত করা। একইসাথে বিএনপি ও আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলের উচিত যে কোনো পক্ষের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মসূচিকে স্বাগত এবং সমর্থন জানানো। সব দলের নীতিনির্ধারকদের বুঝতে হবে সাধারণ মানুষ, বিশেষত তরুণ প্রজন্ম জ্বালাও-পোড়াও, পেট্রোল বোমা ও হরতালের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচিকে ইতিবাচকভাবে নেয় না। ফলে তাদের পাশে পেতে হলে যে কোনো মূল্যে ‘বিচার মানি তালগাছ আমার’ মনোভাব পরিহার করতে হবে। গণতন্ত্রের সত্যিকারের মানসিকতা লালন করে জনমত যে দিকেই যাক, তাতে শ্রদ্ধা প্রদর্শন, গণরায় মেনে নেয়া, দেশের স্বার্থে একে-অপরকে ছাড় দেয়া এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ উন্মোচন করাই হতে হবে দলগুলোর অঙ্গীকার। আগামী বছরের সংসদ নির্বাচন সহিংস হবে না।