মাদক ব্যবসা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অঙ্গীকার করে আত্মসমর্পণ

আলমডাঙ্গা পুলিশ প্রশাসনের অনমনীয় মনভাবের কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা পুলিশ প্রশাসনের অনমনীয় মনভাবের কারণে মাদক বিক্রয় করতে পারছে না শহরের মাদকব্যবসায়ীরা। আলমডাঙ্গা স্টেশনপাড়ার ৭ মাদকব্যবসায়ী দীর্ঘদিনের পেশা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে আসার অঙ্গীকার করে থানায় আত্মসমর্পণ করেছেন। গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় তারা আলমডাঙ্গা থানায় আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অঙ্গীকার করেন।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা থানায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ যোগদানের পর উপজেলাকে মাদকমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তারই ধারাবাহিকতায় সারা শহরজুড়ে প্রায় প্রতিদিনই চলে মাদকবিরোধী মহড়া। থানা পুলিশের এ মাদকবিরোধী মহড়াটি প্রত্যক্ষদর্শীদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়। চায়ের দোকানগুলোতে আলোচনার প্রধান খোরাকে পরিণত হয়ে ওঠে। এছাড়াও আলমডাঙ্গায় মাদকব্যবসা ও মাদকসেবীদের সতর্ক করে মাইকিং করা হয়। মাদকবিরোধী মহড়াসহ প্রতিদিনই শহরের বিভিন্ন মাদকের ডেরায় অভিযান চালিয়ে মাদকব্যবসায়ীসহ মাদকসেবীদের আটক করে নিয়ে আসে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ। শহরের বেশকিছু মাদকব্যবসায়ী ভয়ে আতঙ্কে আলমডাঙ্গা শহর ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে যায়। বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়ানোর একপর্যায়ে আলমডাঙ্গা রেল স্টেশনপাড়ার মাদকব্যবসায়ীরা মাদক ব্যবসা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে অঙ্গীকার করে আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ ফকরুল আলম খানের কাছে থানায় এসে আত্মসমর্পন করে।
এবিষয়ে অফিসার ইনচার্জ আবু জিহান খান বলেন, আলমডাঙ্গা রেল স্টেশন এলাকার ৭জন মাদকব্যবসায়ী গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় থানায় এসে মাদকব্যবসা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অঙ্গীকার করে আত্মসমর্পন করে। এসময় তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করে তাদরেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দেন। তাদেরকে সতর্ক করে বলেন ভবিষ্যতে যদি কারো বিরুদ্ধে মাদকের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তাহলে আইনের কঠোর থেকে কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আলমডাঙ্গা স্টেশনপাড়ার ৭জন মাদকব্যবসায়ী গতকাল বুধবার ১১টায় থানায় হাজির হয়ে মাদকব্যবসা না করার অঙ্গীকার করাসহ মাদকবিরোধী শপথবাক্য পাঠ করেন। এসময় থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ ফকরুল আলম খাঁন তাদের শপথবাক্য পাঠ করান। মাদকব্যবসা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অঙ্গীকার করে আত্মসমর্পণকারী মাদকব্যবসায়ীরা হলেন, আলমডাঙ্গা রেল স্টেশনপাড়ার মৃত বাহাদুর শেখের ছেলে আলাউদ্দিন শেখ (৫০), একই পাড়ার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে রুবেল হোসেন (৩৫), মৃত মহাসিন আলীর ছেলে ওল্টু আলী (৩০), ওল্টুর স্ত্রী মায়া খাতুন (২৫), আহাদ শেখের স্ত্রী মুক্তা খাতুন (২০), মৃত জলিল বিশ^াসের স্ত্রী ফাহিমা খাতুন (৫৫) ও মনোয়ার হোসেনের স্ত্রী মুন্নি খাতুন (৩৫)। গত ৪-৫ দিন আগে স্টেশনপাড়ার মাদকব্যবসায়ী মিনি ও আহাদ শেখ আদালতে আত্মসমর্পন করেন।
আত্মসমর্পনকারী মাদকব্যবসায়ীরা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আলমডাঙ্গা রেল স্টেশন এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন অলি-গলিতে মাদকব্যবসা করে আসছিলো। গত ২মাস আগেও আলমডাঙ্গা রেল স্টেশন ছিলো মাদকের অভয়ারণ্য। আলমডাঙ্গা রেল স্টেশনসহ শহরের অলিতে গলিতে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজা, ইনজেকশনসহ সকল প্রকার মাদক পাওয়া যেতো। যার কারণে প্রতিদিনই শহরে চুরি, ছিনতাই হতো। আর চোরাই মালামাল দিয়ে এসব মাদকব্যবসায়ীদের নিকট থেকে মাদক ক্রয় করে সেবন করতো মাদকসেবীরা।
এসময় আত্মসমর্পনকারী মাদকব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা মাদকব্যবসা করে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে চরম মূল্যহীন অবস্থায় জীবনযাপন করি। বাড়িতে ঠিকমতো বসবাস করতে পারি না, সব সময় আতঙ্কে থাকি। কখন থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, র‌্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের লোকজন এসে আমাদের ধরে নিয়ে যায়। আজ থেকে আমরা আর কোনো দিন মাদক বিক্রি করবো না। আর কেউ বিক্রি করলে আমরা তাকে আইনের হাতে তুলে দেবো।