জ্ঞান ও সংস্কৃতি চর্চার মধ্যে থাকলে অন্ধকার গ্রাস করে না

মেহেরপুর গাংনী চিৎলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর

গাংনী প্রতিনিধি: জিপিএ-৫ এর পেছনে না দৌঁড়ে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে ছাত্র-ছাত্রীদের পরামর্শ দিলেন সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর। গতকাল বুধবার দুপুরে মেহেরপুর গাংনী চিৎলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি ছাত্র-ছাত্রী ও ছাত্রলীগের প্রতি পরামর্শমূলক বক্তব্য দেন।
বক্তৃতায় মন্ত্রী বলেন, আজকাল জিপিএ-৫ না পেলে যেন সব কিছুই হারালাম এমন একটা ভাব অভিভাবকদের মাঝে লক্ষ্য করা যায়। শৈশবের সব স্বপ্ন কেড়ে নিয়ে তাদেরকে ঠেলে দেয়া হয় বস্তাভর্তি বইয়ের জগতে। অন্যদিকে, খেলাধুলা ও সংস্কৃতির চর্চাও বাধাগ্রস্ত করা হয়। এতে শিশুদের মুক্ত চিন্তার বিকাশ ঘটে না। ফলে ছেলে-মেয়েদের বিপথে যাওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের দিকে না তাকিয়ে প্রকৃত মানুষ গড়ে তোলার দিকে নজর দিতে হবে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, আগে লেখাপড়া তারপরে রাজনীতি। জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত না হলে রাজনীতি কোনো কাজে আসবে না।
জঙ্গিবাদ দমনে প্রশাসনের সফলতা রয়েছে উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান নুর বলেন, মানুষের মনের মধ্যে ওরা যে অনুপ্রবেশ করছে তা কিন্তু আমরা ঠেকাতে পারলাম না। মনের মধ্যে অন্ধকার বাসা বেঁধেছে তাই ওরা (জঙ্গিরা) পারছে। তারা অন্ধকারে প্রবেশ করে, আলোর মধ্যে কিন্তু ওরা ঢুকতে পারে না। সেই অন্ধকার তখনই হয়, যখনই কেউ প্রকৃত জ্ঞান, প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করে না এবং সংস্কৃতির চর্চা যাকে স্পর্শ করে না। যদি এগুলো চর্চা থাকে তাহলে কোনো দিনই তরুণের মাঝে অন্ধকার প্রবেশ করতে পারবে না। একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধীরাই পঁচাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা, জাতীয় চার নেতাকে হত্যা, শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা, একযোগে ৬৩ জেলায় বোমা হামলা করেছিলো সেই সাম্প্রদায়িক শক্তি এদেশে জঙ্গিবাদের বীজ বুনে সাম্প্রদায়িক বিভক্তির অপচেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ আজ উন্নত রাষ্ট্রের মাইল ফলক স্পর্শের চেষ্টা করছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ বেঁচে থাকবে। দেশের যে আমূল পরিবর্তন হয়েছে তার প্রমাণ দেশের সর্বস্তরের মানুষ। কিন্তু জ্ঞান ও সংস্কৃতির চর্চা না থাকলে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করা যাবে না। তাই দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞান চর্চায় মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বাকের ভাই খ্যাত আসাদুজ্জামান নুর বক্তব্যে আরও বলেন, অজোপাড়াগাঁর এ স্কুলটির সুন্দর এ অনুষ্ঠান প্রমাণ করে আমরা সভ্যতার কত কাছাকাছি পৌঁছেছি। এ ধরনের আয়োজন মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে। সত্যিকার অর্থে আমি অভিভূত এমন একটি অনুষ্ঠানে আসতে পেরে। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়ন ও বিকাশের দিক তুলে ধরেন তিনি।
দুপুর সোয়া ১২টার পরপরই মন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ঢাকা থেকে চিৎলা পাটবীজ খামার গ্রাউন্ডে অবতরণ করে। সাথে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর এপিএস অ্যাড. সাইফুজ্জামান শেখর ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং এর ফটোগ্রাফার চিৎলা গ্রামের কৃতিসন্তান সাইফুল ইসলাম কল্লোল। এসময় জেলা প্রশাসন, দলীয় নেতৃবৃন্দ ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মন্ত্রী ও শেখরকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়। সেখান থেকে প্রথমে গাড়িযোগে চিৎলা বাজার প্রাঙ্গণে পৌঁছান মন্ত্রী। এ সময় ছাত্র-ছাত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ফুল ছিটিয়ে মন্ত্রীকে বরণ করেন। দুপুর পৌনে ১টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জাতীয় সঙ্গীতের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন মন্ত্রী। পতাকা উত্তোলন শেষে মূল মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চিৎলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনাপর্ষদ সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক। বিশেষ অতিথি ছিলেন মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন দোদুল, মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর এপিএস অ্যাড. সাইফুজ্জামান শেখর, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক, জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ ও পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি একেএম শফিকুল আলম, জেলা আ.লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নুর জাহান বেগম, গাংনী পৌর মেয়র ও যুবলীগ আহ্বায়ক আশরাফুল ইসলাম, গাংনী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনারুল ইসলাম বাবু, মটমুড়া ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল আহম্মেদ ও সাবেক কৃষক লীগের নেতা ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখনসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন নেতৃবৃন্দ।
বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক গোলাম আম্বিয়ার ছোট ছেলে পল্লবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক ও ছড়াকার রফিকুর রশিদ রিজভী ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফসার আলী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির হাতে শুভেচ্ছা স্মারক ও মানপত্র তুলে দেয়া হয়। দ্বিতীয় পর্বে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান, কবিতা, নৃত্য ও নাটক পরিবেশন করে ছাত্র-ছাত্রীরা।