সহকারী শিক্ষকদের দাবি দাওয়া এবং অনশন

দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যেতে হলে শিক্ষার উন্নয়ন ব্যতিরেকে সম্ভব নয়। ফলে শিক্ষার যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করা যেমন জরুরি, তেমনিভাবে শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা আমলে নেয়া বা যে কোনো ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি হলে তা নিরসনেরও বিকল্প নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিভিন্ন সময়েই শিক্ষকরা তাদের দাবি আদায়ে আন্দোলন বা অনশনের মতো কর্মসূচি পালন করে। এ রকম বিষয় সামনে এলে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ দরকার।
বেতন স্কেলে বৈষম্য কমানোর দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের আমরণ অনশন চলছে। রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশন করছেন কয়েক হাজার শিক্ষক। গত শনিবার সকাল ১০টা থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। রাতেও শিক্ষকরা শহীদ মিনারে অবস্থান করেছেন। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহাজোটের ডাকে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। সহকারী শিক্ষকদের আটটি সংগঠন এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। আর সংগঠনের নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন চালিয়ে যাবেন। মহাজোটভুক্ত বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি বলেছেন, ব্যবধান কমানোর জন্য আগে আশ্বাস দেয়া হলেও দীর্ঘদিনেও সেটা পূরণ করা হয়নি। এ জন্য আমরণ অনশন ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো উপায় নেই। এমন বিষয়ও সামনে এসেছে যে, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা অনশন ভাঙবেন না। শিক্ষকদের দাবি অনুযায়ী বেতন বৈষম্য কমানোর আশ্বাস দেয়া হলেও সেটা পূরণ হয়নি। এ ক্ষেত্রে বেতন বৈষম্যকে কেন্দ্র করে যদি শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ পরিলক্ষিত হয় বা দাবি আদায়ে শিক্ষকরা অনশনের মতো কর্মসূচিতে যায় তবে সংশ্লিষ্টদের তা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। ফলে দাবির যৌক্তিকতা এবং সার্বিক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। কয়েক হাজার শিক্ষক সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অনশনে অংশ নিচ্ছেন- কিন্তু ইতোমধ্যে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে হাসপাতালেও নেয়া হয়েছে। বাকিদের অনশনস্থলেই স্যালাইন দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যতো দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এটা উল্লেখ্য যে, শহীদ মিনারে আন্দোলনরত সহকারী শিক্ষকরা বলছেন, তাদের দাবি একটাই- প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের মাত্র একধাপ নিচে রাখতে হবে। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকদের চেয়ে তিনধাপ নিচের স্কেলে বেতন পান সহকারী শিক্ষকরা। প্রধান শিক্ষকরা বেতন স্কেলের ১১তম গ্রেডে বেতন পান। আর সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম গ্রেডে। এছাড়া প্রশিক্ষণ ছাড়াও শিক্ষক আছেন। তাদের বেতন স্কেল আরও একধাপ কম।
শিক্ষকরা যদি ব্যক্তি জীবনে বেতন বৈষম্যকে কেন্দ্র করে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন বা তাদের ভেতর অসন্তোষ পরিলক্ষিত হয় তবে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে শিক্ষার্থীদের ওপর-এমন আশঙ্কাও অমূলক নয়। গতরাত ১০টায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কথা বলে শিক্ষকদের উৎখাত করা হয়েছে বলে শেষ খবরে জানা গছে। তবে আবারও অনশনে বসতে পারেন। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যতো দ্রুত সম্ভব সৃষ্ট পরিস্থিতির ক্ষেত্রে সুষ্ঠু সমাধান নিশ্চিত করা দরকার। অবশ্যই সহকারী শিক্ষকদের দাবি পুরোটাই অমূলক নয় হেতু পূরণের দাবি রাখে।