চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কে পৃথক দুটি দুর্ঘটনায় ট্রাকচালকসহ নিহত ২ : আহত ৪

নতুন মোটরসাইকেল বাড়িতে দেখিয়ে ঢাকায় ফেরার পথে লাটাহাম্বারের ধাক্কা : দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ
স্টাফ রিপোর্টার/বদরগঞ্জ প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কে পৃথক দুটি দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে নয়মাইল নামকস্থানে শ্যালোইঞ্জিন চালিত লাটাহাম্বারের ধাক্কায় আছড়ে পড়ে মোটরসাইকেল চালক রাশেদুল হাসান (২৮) গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পর সকাল ৯টার দিকে তিনি মারা যান। একই সড়কে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে সুবদিয়া সিপির অদূরে দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক ট্রাক ড্রাইভার নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অপর ট্রাকচালকসহ ট্রাক আরোহী কপিচাষি ৪ জন। এদের মধ্যে একজনকে রাজশাহী রেফার করা হয়েছে। নিহত ট্রাকচালক দবির যুগিরহুদার আক্কাস আলীর ছেলে।
নিহত মোটরসাইকেল চালক রাশেদুল হাসান চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার খাদিমপুর ইউনিয়নের পাঁচকমলাপুরের বিশ্বাসপাড়ার আব্দুর রাজ্জাক বিশ্বাসের ছেলে। রাশেদুল হাসান ঢাকার একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি করতেন। সম্প্রতি অ্যাপাচি আরটিআর মোটরসাইকেল কিনে বাড়িতে ঘুরতে আসেন। গতপরশু রোববার বাড়িতে আসার পর গতকাল সোমবার সকাল আনুমানিক ৭টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হন। অপরদিকে সরোজগঞ্জ যুগিরহুদার আক্কাস আলীর ছেলে ট্রাকচালক দবির উদ্দীন (৩০) সরোজগঞ্জ থেকে ভুট্টা নিয়ে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা হন। পথিমধ্যে সিপির অদূরে বিপরীতমুখি কপিবহন করা ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত হন। তাকেসহ অন্যান্য আহতদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দবিরকে রাজশাহী নেয়ার পরমার্শ দেন চিকিৎসক। রাজশাহী নেয়ার আগেই মারা যান দবির। এছাড়াও আহতদের মধ্যে গুরুতর জখম দামুড়হুদার ছুটিপুর পোতারপাড়ার মজিবর রহমানের ছেলে তাইজেলকে রাজশাহী নেয়া হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে একই গ্রামের মিলনের ছেলে আশরাফুল, শরিফ উদ্দীনের ছেলে শফিকুল ইসলাম ও অপর ট্রাক চালক চুয়াডাঙ্গা দৌলাতদিয়াড় স্কুলপাড়ার আকরামকে (৫০)। তিনি আক্কাস আলীর ছেলে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার পাঁচকমলাপুরের আব্দুর রাজ্জাক বিশ্বাসের এক ছেলে এক মেয়ে। রাশেদুল হাসান ছিলেন বড়। ঢাকায় চাকরি করে সংসারে স্বচ্ছলতা আনলেও বিয়ে করেননি। সম্প্রতি সে একটি নতুন মোটরসাইকেল কেনে। ওই মোটরসাইকেলযোগে তিনি ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরেন। গতকাল কর্মস্থল ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের নয়মাইল নামক স্থানে শ্যালোইঞ্জিন চালিত দানবরূপী লাটাহাম্বারের ধাক্কায় আছড়ে পড়ে গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। খবর দেয়া হয় তার বাড়িতে। চিকিৎসার এক পর্যায়ে সকাল ৯টার দিকে মারা গেলে নিকটজনদের আহাজারিতে হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। পরে লাশ নেয়া হয় নিজ গ্রামে। গতকালই বাদ মাগরিব নামাজে জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। যে যুবক পরিশ্রম করে পিতা মাতাসহ পুরো পরিবারের মুখে হাসিফোটাতে শুরু করেছিলেন, সেই যুবক দুর্ঘটনায় অকালেই ঝরে যাওয়ায় গ্রামের সচেতনমহল সান্ত¦না দেয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।
ডিঙ্গেদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ থেকে সরোজগঞ্জ যুগিরহুদার ট্রাকচালক দবির উদ্দীন দবির ট্রাকে ভুট্টা ভর্তি করে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা হন। অপরদিকে দৌলাতদিয়াড় স্কুলপাড়ার ট্রাকচালক আকরাম হোসেন দামুড়হুদার ছুটিপুর পোতারপাড়ামাঠ থেকে কপি নিয়ে খুলনার উদ্দেশে রওনা হন। কপির ওপর ওঠেন চাষি ছুটিপুর পোতারপাড়ার মিলনের ছেলে আশরাফুল (২৩), মজিবর রহমানের ছেলে তাইজেল, শরিফ উদ্দীনের ছেলে শফিকুল ইসলাম। দুটি ট্রাক চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের পাঁচমাইল সিপির অদূরে পৌঁছুলে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। কপির ওপর থাকা ট্রাক আরোহীরা আছড়ে পড়ে গুরুতর আহত হন। ভুট্টাবহন করা ট্রাক চালক দবির পেটে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে লুটিয়ে পড়েন। এদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাজশাহী নেয়ার পথে দবির মারা যান। তাইজেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকেও রাজশাহীর উদ্দেশে নেয়া হয়েছে। ট্রাক চালক আকরাম, শফিকুল, ও আশরাফুলকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।