স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে গত কয়েক মাসে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ৫ লাখ ২০ হাজার মানুষ নতুন করে দরিদ্রসীমার নীচে চলে গেছে। আরও অনেক মানুষ এ সীমার কাছাকাছি এসে ঠেকেছেন। এদের পক্ষে আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভাবনা কম। আগামীতে আন্তর্জাতিক বাজারে মোটাচালের দাম আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ কারণে চাল নিয়ে বড় ধরনের সংকট তৈরির আশঙ্কা করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)।
‘বাংলাদেশের অর্থনীতির ত্রৈ-মাসিক পর্যালোচনা’ বিষয়ে সংস্থার এক প্রতিবেদনে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। আগাম সতর্কতা হিসেবে এখনই অভ্যন্তরীন বাজারে চাল সংগ্রহ এবং আমদানিতে বাস্তবসম্মত নীতিমালা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
শনিবার রাজধানীর মহাখালির ব্র্যাক ইন সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান। বিদায়ী বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিবিধি এবং আগামী বছরের গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেন তিনি।
প্রতিবেদনে চাল ছাড়াও রফতানি, প্রবাসী আয়, ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতিও তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, গত অর্থ বছরে জুলাই-সেপ্টেম্বর চালের আমদানি ব্যয় ছিলো ৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। চলতি অর্থ বছরের একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৯১২ কোটি টাকা। এ বছরের প্রথম তিন মাস যে পরিমাণ চাল আমদানি করা হয়েছে, তা গত অর্থবছরের প্রায় ৫ গুণ। এত বেশি আমদানির পরও চালের দাম বেড়েছে এবং এ বৃদ্ধি এখনও অব্যাহত আছে। অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, অর্থনীতিতে জনপ্রিয় মডেল (সিজিইএম) ব্যবহার করে দেখা গেছে, চালের দাম বাড়ার কারণে দারিদ্রের হার শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ৫ লাখ ২০ হাজার মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। গত মে থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েছেন তারা।
চালের উৎপাদন, আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা এবং রফতানিকারক দেশগুলোর সাথে কৌশলগত চুক্তির বিষয়ে একটি কার্যকর চালনীতির প্রস্তাব করেন তিনি।
প্রতিবেদনে আর্থিক খাতের অবস্থার কথা তুলে ধরে বলা হয়, অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে ভঙ্গুর ব্যাকিং অবস্থা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এজন্যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও শক্তিশালী করা এবং এখাতে সুশাসন নিশ্চিত করার পরামর্শ দেয়া হয়।
রফতানি প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায়, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের জুলাই নভেম্বর পর্যন্ত রফতানি বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। চামড়া শিল্পে এ বছরের পণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হলেও শুধু দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে রফতানি ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ কম হয়েছে। অন্যদিকে গত অর্থবছরের খরা কাটিয়ে এ বছরের নভেম্বর পর্যন্ত প্রবাসী আয় বেড়েছে ১০ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ আয় ৬ দশমিক ৬ শতাংশ কম। তবে আগামী বছর প্রবাসী আয় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিবেদনে আগামীতে অর্থনীতির জন্য ৫টি চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে বলা হয়, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ আরও কমে যেতে পারে।