গৃহকর্তার ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা দূরের কথা গৃহপরিচারিকার কুমারিত্ব অক্ষুণ্ন : মামলার নেপথ্য ফাঁস

চুয়াডাঙ্গা হায়দারপুরের মেয়ে শিশুকাল থেকে জীবনার অর্থশালী মন্টু মিয়ার বাড়ি রেখে মোটাঅঙ্কের অর্থ হাতানোর নীল নকশা

৩ লাখ টাকা ও ২ বিঘা জমি আদায় করে দেয়ার লোভ দেখিয়ে খালা ফতেসহ কয়েকজন ফুসলে দায়ের করিয়েছে মামলা
স্টাফ রিপোর্টার: ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা দূরের কথা, যাকে দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা হয়েছিলো তার ডাক্তারি পরীক্ষায় কুমারিত্ব অক্ষত থাকার প্রমাণ মিলেছে। ফলে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে কিশোরী চম্পা কাদের প্ররোচনায় তার পিতৃতুল্য গৃহকর্তা চুয়াডাঙ্গা জীবনার অর্থশালী মন্টুর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেছে তা স্বীকার করেছে। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসির বিচক্ষণতায় প্রতারকচক্রের মুখোশ খুলতে শুরু করেছে।
চুয়াডাঙ্গা হায়দারপুরের মেয়ে চম্পা বলেছে, তাকে তার খালা ফাতেমা খাতুন ফতে, প্রতিবেশী আরিফুল ইসলাম ও গ্রামেরই আজিবার মেম্বার বলেছিলো ৩ লাখ টাকা ও ২ বিঘা জমি দেবো। আমরা যেভাবে মামলা করতে বলবো, সেই ভাবে মামলা করার পরপরই আদায় করে দেয়া হবে আরো কিছু। ধর্ষণের কারণে পেটে সন্তান আসার কথা ওরাই শিখিয়ে দিয়েছিলো। পুলিশ ধর্ষণ মামলার ভিকটিমের এ স্বীকারোক্তি পেয়ে চমকে ওঠে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর তোজাম্মেল হক বলেন, তদন্তের শুরুতেই বিষয়টি সন্দেহ হয়। মামলার সময় আল্ট্রাসনো রিপোর্টও দেয়া হয়। অথচ এখন ডাক্তারি পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে সেসবই ভুয়া। অন্যের আল্ট্রাসনোর রিপোর্ট ওই হায়দারপুরের চম্পার বলে চালানো হয়েছে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের হায়দারপুর গ্রামের শুকুর আলীর মেয়ে চম্পা খাতুন শিশুকাল থেকে বদরগঞ্জ জীবনার মৃত ওয়াজের আলী বিশ্বাসের ছেলে অর্থশালী মন্টুর বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করে আসছিলো। চম্পার বয়স এখন ১৫ বছর। গত অক্টোবর চম্পা তার দীর্ঘদিনের গৃহকর্তা মন্টুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলে। বলে ধর্ষণের শিকার হওয়ায় সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে। এ অভিযোগ তুলে আইনগত সহায়তা চেয়ে চুয়াডাঙ্গার মানবতা ফাউন্ডেশনে আবেদনও করে। মামলা হয়। পত্রিকায় প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ তোজাম্মেল হক। প্রকৃত ঘটনা উন্মোচনের প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ। এরই একপর্যায়ে গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় নিয়ে চম্পার ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। পরীক্ষা শেষে চিকিৎসক যখন বলেন, এই মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়নি। তাছাড়া ওর কুমারিত্ব অক্ষুণœ রয়েছে। এ কথ্য পেয়েই মামলার বিচক্ষণ তদন্তকর্তা মামলার ভিকটিমকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। কেন মিথ্যার আশ্রয়? অর্থ আর জমির লোভে কি পিতৃতুল্য কারোর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ তোলা যায়?
চম্পার বরাত দিয়ে পুলিশসূত্র বলেছে, চম্পাকে তার খালা ফাতেমা খাতুন ফতে, আজিবর মেম্বার ও আরিফুল ইসলাম নামের একজন তিন লাখ টাকা আদায় করে দেয়ার কথা বলে ওকে দিয়ে অভিযোগ উত্থাপন করানো হয়েছে। যেহেতু ভিকটিম নিজেই সব স্বীকার করেছে, সেহেতু বিষয়টি আদালতে পেশ করা হবে। মামলায় সহয়তা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে। অপরদিকে গতকাল জীবনা গ্রামে অভিযুক্ত মন্টু সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গেলে স্থানীয়দের অধিকাংশই বলেছেন, মন্টু মিয়ার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ উত্থাপনে আমরা হতবাক।