সুন্দরের পথে আমরা ঘুরবো কবে?

সত্যিই তো, নীতি কথা ঘরে বসে বলা যতো সহজ, বাস্তবায়ন অতোটা নয়। যে সমাজে মানুষের মাছি থকথকে ভিড়, খানাপিনার খবর পেলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে মরে মানুষ, সেই সমাজই কি মানুষকে স্বার্থান্ধ করে না? করে। কারণ- মানুষের চরিত্রে সমাজের প্রভাবই থাকে সিংহভাগ, বাকিটুকু পরিবার ও নিজের প্রচেষ্টার প্রভাব। যারা নিজের প্রচেষ্টাকে কাজে লাগিয়ে তথা গড্ডালিকায় গা না ভাসিয়ে স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটতে পারে তাদেরই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের সম্ভাবনা থাকে। সে ক্ষেত্রেও স্বীকৃতির মাপকাঠিটা নিজের হাতে নয়, থাকে সমাজেরই কাছে। অথচ সমাজের স্রোতে ঘোরে কোনো এক নেতার ভিন্ন স্লোগানে।
কন্যা দায়গ্রস্থতার কথা বলে ফরিদপুরের শাহ ফরিদ বলে পরিচয় দেয়া মধ্যবয়সী ব্যক্তি চুয়াডাঙ্গায় মানুষের কাছে হাত পেতে বিপাকে পড়েছে। শেষ পর্যন্ত তাকে পুলিশের গারদে যেতে হয়েছে। মসজিদের মুসল্লিদের প্রশ্নের মুখে শাহ ফরিদ যখন ভুয়া ঠিকানা দিয়ে নিজেকে আড়াল করতে চেয়েছে তখনই ঝরতে শুরু করেছে তার মুখোশ। কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা যে সমাজের সেই সমাজ কি এতোটাই নিষ্ঠুর যে তাকে কয়েকটি জেলা পেরিয়ে চুয়াডাঙ্গায় আসতে হয়েছে? তাছাড়া কন্যা দায়গ্রস্ততার বিষয়টিও তো সেকেলে। এখন কি অতোটা পণপ্রথা রয়েছে যে, গাড়িভরে কাড়ি কাড়ি টাকা নিতে পারলে কন্যাকে কেউ বিয়ে করবে না? নারীদের এগিয়ে নিতে নিখরচায় শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নারীদের স্বনির্ভর করতে নানা কর্মসূচি দেশে এখনও চলমান। তা হলে ওই পিতা কেমন পিতা যে, তার মেয়েকে নিয়ে এতোটাই অসহায় হতে হয়েছে যে, তাকে হাত পাততে হচ্ছে। হাত পাতা তথা ভিক্ষাবৃত্তি আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। যদিও পুনর্বাসন নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় শহর। বন্দরনগরী। উন্নয়নের রূপকার হিসেবে দীর্ঘদিন স্বীকৃত আসনে অসীন ছিলেন হাজি মহিউদ্দীন। তার মৃত্যুর পর কুলখানিতে বেশ কয়েকটি স্থানে খানাপিনের আয়োজন করা হয়। যেখানে ইসলাম ধর্মালম্বী ছাড়া অন্যদের জন্য আয়োজন সেখানে গতপরশু পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য মতে, নিহতদের সকলেই সোনাতন ধর্মালম্বী। অধিকাংশই দাস সম্প্রদায়ের। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, খানাস্থলে প্রবেশদ্বারের ঢালু স্থানে একজনের একটি মোবাইলফোন হাত থেকে পড়ে গেলে তিনি তা তুলতে যান। মানুষের চাপে তা তুলতে পারা দূরের কথা পদপিষ্ট হতে থাকে। তার শরীরে বেঁধে অন্যরাও পড়ে পদপিষ্ট হয়ে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। সংক্ষিপ্ত এই বর্ণনাটুকুই যথেষ্ট, পরশু দুপুরের খাওয়ার আয়োজনের ওই স্থানে কতোটা ভিড় ছিলো। ভয়ানক হুড়োহুড়ি না থাকলে ওতোগুলো প্রাণ অতোটা কষ্টে অকালে নিশ্চয় ঝরে যেতো না। এ প্রাণহানি কি জনসংখ্যা বিস্ফোণেরই কুফল নয়?
আমাদের প্রিয় ধরণীর বুকে এমনও কিছু সমাজ রয়েছে যেখানে পূর্ব পুরুষের কোনো এক তুচ্ছ অপরাধে পরের পর প্রজন্মকে শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে। যদিও শাস্তির ধরণ দেখিয়ে প্রশ্ন তুলে বলা হয়, পূর্বপুরুষের অন্যায়ের খেসারত প্রজন্ম না দিলে সমাজ অতো ঝাড়ুদার পাবে কোথায়? আবার এমনও সমাজ রয়েছে যেখানে কেউ অন্যায় করলে শুধু তারই নয়, সমাজের জন্য তার পূর্ব পুরুষদের অবদানের কথা তুলে ধরে তাকে সুধরে নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়। সমাজের এই ভিন্ন চিত্র মানুষের চরিত্রগঠনেও স্পষ্ট ভিন্নতা এনে দেয়। এই ভিন্নতার জন্য কাউকে না কাউকে ভিন্ন হুংকারে ঘোরাতে হয়েছে স্রোতে। আমরা ঘুরবো কবে?