ঝিনাইদহে তিন ছেলে ও এক মেয়ে’র জননী আনজিরা বেগম পঁয়ষট্টিতে বৃত্তি পরীক্ষা

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহে তিন ছেলে ও এক মেয়ে’র জননী আনজিরা বেগম পঁয়ষট্টিতে বৃত্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন। একেকটি কক্ষ খুদে পরীক্ষার্থীতে ঠাসা। মনোযোগ দিয়ে লিখছে সবাই। তবে একটি কক্ষে খুদে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে এমন একজন বসেছেন, সহজেই চোখ আটকে যায় তাকে দেখে। মনোযোগ সহকারে খাতায় উত্তর লিখছেন পাকা চুলের এক নারী, চোঁখে ভারী চশমা। ঝিনাইদহ সোনাদাহ গ্রামের ১২নং দোগাছি ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা মোকাদ্দেছ হোসেনের স্ত্রী আনজিরা (৬৫) সে তিন ছেলে ও এক মেয়ে’র জননী। পঁয়ষট্টি বছর বয়সে এসে তিনি বাংলাদেশ কিন্ডার গার্টেন অ্যাসোসিয়েশন এর প্লে শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন। পরীক্ষা কেন্দ্র কাঞ্চননগর মডেল হাই স্কুল ঝিনাইদহ। পরীক্ষা শেষে কথা হয় আনজির’র সঙ্গে। তিনি শোনালেন জীবনের গল্প, পড়াশোনা নিয়ে তার অদম্য ইচ্ছার কথা। বাড়ির কাছেই ছিলো স্কুল। কিন্তু পারিবারিক অভাবের কারণে কোনো দিন স্কুলে যাওয়া হয়নি। অল্প বয়সে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয় তাকে। সে জন্য লেখাপড়া করতে পারেননি এ আফসোস নিজের হৃদয়ে বয়ে নিয়ে বেড়াতেন আনজিরা বেগম। তিনি বলেন, হাসপাতাল, ব্যাংকে গেলে কাগজে নিজের নামটাও লিখতে পারি না। সে জন্য সিদ্ধান্ত নিই, বয়স যাই হোক না কেন, পড়াশোনা শিখতেই হবে। আনজিরা বেগম আরও বলেন, ঝিনাইদহ গোয়ালপাড়া বাজারে বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে রোজভ্যালী স্কুলে নাতী ছেলেকে নিয়ে আসতাম তার সাথে ক্লাসও করতাম নিয়মিত। তার কিছুদিন পর আমিও ভর্তি হই। বয়স ৬৫ তবুও তিনি নিয়মিত ক্লাস করেছেন। খুদে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিনি খুব সহজেই মানিয়ে নেন। সহপাঠীরা কেউ নানি, কেউ দাদি বলে ডাকে। তবে মন খারাপ হয়নি একটুও তাতে। আনজিরা বাংলাদেশ কিন্ডার গার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের ‘প্লে’ শ্রেণিতে এক বছর পড়ার পর সে বৃত্তি পরীক্ষা দিচ্ছে। তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কিন্তু পড়াশোনা করে চাকরি করবেন, তেমনটি নয়। পড়তে ভালো লাগে বলেই পড়েন তিনি। রোজভ্যালী স্কুলে প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নাতি ছেলের সাথে সে প্রতিদিন স্কুলে এসে ক্লাস করতো। আমি একদিন ক্লাস চলাকালীন ক্লাসরুমে গেলে সে আমাকে দেখে একটি কাগজটি লুকিয়ে রাখে। পরে কাগজটিতে দেখি অ, আ, ই লেখার চেষ্টা করছেন তিনি। তার এ চেষ্টা দেখে আমি স্কুলে ‘প্লে’ শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দিই। এক বছর নিয়মিত ক্লাস করার পর বৃত্তি পরীক্ষা দেয়ার জন্য অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে প্রাইভেট পড়া শুরু করলো নিজ ইচ্ছা থেকে এবং অন্য ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস মিস করলেও আরজিনা একদিনও ক্লাস মিস করেনি। সে ক্লাসে খুব মনোযোগী ছিলেন তিনি ভালো ফলাফল করবেন বলে আশাবাদী আমরা।

Leave a comment