১৯ বছর ধরে কারাবন্দি নুরুজ্জামান লাল্টুর সম্পর্কে তার স্ত্রীর বিবৃতি। লাল্টু ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

স্টাফ রিপোর্টার: ১৯ বছর ধরে কারাবন্দি নুরুজ্জামান লাল্টুর সম্পর্কে তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেছেন আমার স্বামী নুরুজ্জামান লাল্টু সর্বহারা প্রধান ছিলেন না। তিনি নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি বেদখল ঠেকাতে গিয়ে কিছু বিপথগামী মানুষের প্ররোচনায় বিপথে গিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু সর্বহারা প্রধান ছিলেন না। আমার স্বামী বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে নিজের জীবন বাঁজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন। আমার স্বামী ১৯৭১ সালে ভারতের চাকুলিয়ায় গেরিলা ট্রেনিং করে দেশে ফিরে ৮নং সেক্টরে যোগদিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। তার মুক্তিবার্তা (লালবহি) নং ০৪০৬০২০০২৪, গেজেট নং ৫৪৩। আলমডাঙ্গা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বও পালন করেছেন। আমার শশুর আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দীন। পৈত্রিকভাবে আমার স্বামী অনেক সম্পত্তির অধিকারী হন। সে সময় গ্রামের প্রভাবশালী কয়েকজনের নজর পড়ে আমার শশুরের অঢেল সম্পত্তির দিকে। আমার শশুরের এ সম্পত্তি তারা জবর দখল করে নেয়ার অপচেষ্টা করে এবং আমার স্বামী, সন্তানদের মেরে রক্তাক্ত জখম করে গ্রাম ছাড়া করে দেয়। বাবার পৈত্রিক সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করতে কিছু বিপথগামী মানুষের প্ররোচনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত বাহিনীর সাথে যুক্ত হয় এ কথা আমি অস্বীকার করবো না। তবে বাংলাদেশের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের মাধ্যমে ১৯৯৮ সালে পুলিশের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আমার স্বামী আত্মসমর্পণ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার আওতায় আসা সত্বেও ১৯ বছর ধরে আমার স্বামী করাভোগ করেছেন। তার পরও আইনের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা রেখে নিজেদের অপরাধ বড় করে দেখে সবকিছু মেনে নিয়েছি। সম্প্রতি আমার স্বামী হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভ করেছেন। তার বয়স (৭০ বছর) বাড়ার সাথে সাথে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিক, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ তার শরীরে বাসা বেঁধেছে। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাড়িয়ে আমি শেষ বয়সে বাকী জীবনটুকু স্বামীর সেবা করতে চাই। আমার স্বামীর ইচ্ছা বাকি জীবনটুকু সৎপথে অতিবাহিত করে পরিবার পরিজনের সাথে কাটাতে চাই। আমার স্বামী দেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে যে ভূমিকা রেখেছিলো তার সামান্য প্রতিদান স্বরুপ জীবনের বাকি দিনগুলো নিজ ভিটেই থাকার অনুমতি চাচ্ছে চুয়াডাঙ্গাবাসীর নিকট। একই সাথে মাননীয় হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, মাননীয় জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ ও পুলিশ সুপার মাহাবুবুর রহমান পিপিএম মহোদয়ের নিকট আমার স্বামীর বাকি জীবনটুকু আমি ভিক্ষা চাইছি।