ব্লাস্ট-প্রতিরোধী গমের নতুন জাতের স্বীকৃতি

স্টাফ রিপোর্টার: ব্লাস্ট-প্রতিরোধী গমের নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) গম গবেষণা কেন্দ্র। এর নামকরণ করা হয়েছে বারি গম ৩৩। ইতিমধ্যে জাতীয় বীজ বোর্ড জাতটি অনুমোদন দিয়েছে। আবাদের জন্য আগামী বছর এই বীজ কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা হবে।

বারির গম গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নয়ন কেন্দ্রের (সিমিট) দুটি জাতের সাথে সংকরায়ণের মাধ্যমে উচ্চফলনশীল গমের জাতটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এটি ব্লাস্ট রোগপ্রতিরোধী, পাতার দাগ রোগ সহনশীল ও মরিচা রোগপ্রতিরোধী এবং তাপ সহিষ্ণু। এ ছাড়া এটি জিঙ্কসমৃদ্ধ, যার দানায় জিঙ্কের মাত্রা ৫০-৫৫ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন)। জাতটি প্রতিকূল পরিবেশ সহনশীল। এর জীবনকাল ১১০-১১৫ দিন। জাতটির গাছ শক্ত, শিষ লম্বা এবং প্রতি শিষে দানার সংখ্যা ৪২-৪৭ টি। আকার মাঝারি এবং হাজার দানার ওজন ৪৫-৫২ গ্রাম। গাছের রং গাঢ় সবুজ। উপযুক্ত পরিবেশে হেক্টরপ্রতি ফলন চার থেকে পাঁচ মেট্রিক টন। জাতটি ১৫ থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বপনের উপযুক্ত সময়। তবে মধ্যম মাত্রার তাপ সহনশীল হওয়ায় এটি ১৫ থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বপন করলে অন্য জাতের তুলনায় বেশি ফলন পাওয়া যায়। ২০১৩ সালে জাতটি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। এর কৌলিক সারি (সিরিয়াল নম্বর) বিএডব্লিউ-১২৬০। ২০১৬-১৭ রবি মৌসুমে যশোর, ফরিদপুর, রাজশাহী, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লাসহ দেশের ১২টি স্থানে জাতটির মাঠপর্যায়ে গবেষণা হয়। গত ১১ অক্টোবর জাতীয় বীজ বোর্ডের ৯৩তম সভায় বারি গম ৩৩ নামে জাতটিকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, যশোর, বরিশাল ও ভোলা জেলায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ৭ জেলার প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির গম এ রোগের আক্রমণের শিকার হয়। কৃষকেরা মূলত বারি গম ২৬ জাতটি বেশি পরিমাণে চাষ করেন। ওই জাতের গমে ব্লাস্ট ব্যাপক আকারে আক্রমণ করে। গত মরসুমের শুরুতে গম চাষে নিরুৎসাহিত করতে কৃষকদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রচারণা চালানো হয়। চলতি মরসুমেও গম চাষে নিরুৎসাহিত করতে বিএডিসি (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন) কৃষকদের কোনো বীজ সরবরাহ করেনি।।

কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকদের সাধে কথা বলে জানা যায়, গমের ব্লাস্ট একটি ক্ষতিকর ছত্রাকজনিত রোগ। গমের শিষ বের হওয়া থেকে ফুল ফোটার সময়ে তুলনামূলক গরম ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া থাকলে এ রোগের আক্রমণ দেখা দিতে পারে। প্রধানত গমের শিষে ছত্রাকের আক্রমণ হয়। শিষের আক্রান্ত স্থানে কালো দাগ পড়ে। আক্রান্ত স্থানের ওপরের অংশ সাদা হয়ে যায়। তবে শিষের গোড়ায় আক্রমণ হলে পুরো শিষ শুকিয়ে সাদা হয়ে যায়। আক্রান্ত শিষের দানা অপুষ্ট হয় ও কুঁচকে যায়। দানা ধূসর বর্ণের হয়ে যায়। গমের পাতায়ও এ রোগের আক্রমণ হতে পারে। এক্ষেত্রে পাতায় চোখের মতো ধূসর বর্ণের ছোট ছোট দাগ পড়ে। গমের ব্লাস্ট রোগ নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে বারির গম গবেষণা কেন্দ্র, যশোরে। ল্যাবরেটরি পরীক্ষা হচ্ছে বারির গম গবেষণা কেন্দ্র, দিনাজপুরে।

যশোর কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘গমের ব্লাস্ট রোগটি আমাদের দেশে একেবারেই নতুন। গত বছর গমে এই রোগটি দেখা দেয়ার পর গবেষণা শুরু হয়েছে। বারি গম ৩৩ নামে নতুন একটি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। কৃষক পর্যায়ে গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক সময়ে বপনে জাতটিতে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ হয়নি। তবে দেরিতে বপনে জাতটিতে এক শতাংশেরও কম ব্লাস্টের আক্রমণ দেখা গেছে।’

দিনাজপুর কেন্দ্রের পরিচালক নরেশ চন্দ্র দেব বর্মা বলেন, নতুন উদ্ভাবিত জাতটি জাতীয় বীজ বোর্ড ‘ব্লাস্ট রোগপ্রতিরোধী’ জাত হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে। এরপর ভিত্তি বীজ উৎপাদনের জন্য বিএডিসিকে ব্রিডার সিড দেয়া হয়েছে। আবাদের জন্য আগামী বছর বীজ কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা হবে।