স্টাফ রিপোর্টার: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে কোনো ছাড় দেবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। উল্টো বিএনপি-জামায়াতের যে কোনো আন্দোলন ও সহিংসতাকে রুখতে আরও কঠোর হবে আওয়ামী লীগ। প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক উভয়ভাবেই মোকাবেলা করবে তাদের। বিশেষভাবে ঢাকায় যেন বিএনপি রাজপথে নামতে না পারে সে জন্য যথেষ্ট সতর্ক আওয়ামী লীগ। এ জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচন না-ও হতে পারে বলে মনে করেন একাধিক নেতা। কারণ, এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রচারণার সুযোগে মাঠে নামতে পারে বিএনপি। আর কোনোভাবে তারা ঢাকার মাঠে নামার সুযোগ পেলে পরবর্তীতে তাদের দমিয়ে রাখা কঠিন হবে বলে মনে করেন শাসকদলের নেতারা।
এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ কোন্দল দূর করে দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নেতাকর্মীদের রাশ টেনে ধরা এবং নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা রোধ করতে কঠোরতা অবলম্বন করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির নীতি-নির্ধারকরা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মতে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবেই। কিন্তু মাঠে তাদের অবস্থান না থাকায় জয়ের তেমন আশা নেই। আর নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াসহ দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকের মামলায় সাজা হবে বলে ধরে নিচ্ছেন তারা। সে জন্য নির্বাচনের আগে দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে বিএনপি। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিচ্ছে। তবে তাদের সে সুযোগ দেয়া হবে না।
অন্যদিকে রংপুর, ঢাকা উত্তর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট এবং গাজীপুর সিটি নির্বাচনে প্রচারণা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন খালেদা জিয়াসহ বিএনপির শীর্ষ নেতারা। স্বাভাবিকভাবে সিটি নির্বাচনের প্রচারণায় মাঠে নামলে বাধা দেয়ার সুযোগ থাকে না। সে জন্য কিছুটা চিন্তিত আওয়ামী লীগ। তবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির নেতারা যাতে ভোটারদের বেশি প্রভাবিত করতে না পারেন, সে জন্য কৌশল ঠিক করছে আওয়ামী লীগ। আর নির্বাচনের পরবর্তী সময়ও বিএনপির উজ্জীবিত অবস্থানে যাতে ভাটা পড়ে, তারও পরিকল্পনা করছেন ক্ষমতাসীনরা। একই সময় মাঠপর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। যেসব জেলায় সমস্যা রয়েছে সেখানকার নেতাদের ঢাকায় ডেকে এনে বৈঠক করছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলটি চায় আগামী বছরের মে-জুন মাসের মধ্যেই অভ্যন্তরীণ কোন্দল যতোটা সম্ভব দূর করে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে যদি কোনো নেতা দলের নির্দেশ না মানেন, তাহলে কঠোর নীতি অবলম্বন করা হবে। দলের নেতাদের ক্ষোভ আর হতাশা যেন বিশৃঙ্খলায় রূপান্তরিত না হয়, সেটাও নিয়ন্ত্রণ করা হবে। নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে বিশৃঙ্খলা, বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া অথবা দলের প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করা এবং সহযোগিতা না করার মতো বিষয়গুলোতে কঠোর হবেন নেতারা।
সূত্র জানায়, অতীতের নির্বাচনগুলোতে অনেকে দলীয় নির্দেশনা ও শৃঙ্খলা না মেনে বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করলেও দল তাদের শাস্তি দেয়নি। বরং অঘোষিতভাবে ছাড় দেয়া হয়েছে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে এবার কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান কেন্দ্রীয় নেতারা। সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতে হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে সচিবালয় এলাকায় ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সে সময় নেতাকর্মীরা প্রায় অর্ধশত গাড়ি ভাঙচুর করেন এবং কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেন। আগামীতে বিএনপি নেতাকর্মীরা আরও অরাজক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেন বলে শঙ্কা ক্ষমতাসীনদের। তাই আগে-ভাগেই কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের।
এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতে হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে কর্মীদের গাড়ি পোড়ানো ও ভাঙচুরে ইন্ধন দিয়েছেন। আগামীতে যদি এগুলো হয় তাহলে ফল ভালো হবে না। সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিবে, সরকার আইনশৃঙ্খলাকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করবে। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপির কর্মীরা সাধারণ মানুষের গাড়িতে আগুন দিচ্ছে। সাধারণ মানুষের গাড়িতে আগুন দেয়া তো সন্ত্রাসী কাজ। তারা হরতাল-অবরোধ করেছেন। কিন্তু গাড়িতে আগুন দেয়া, মানুষকে পুড়িয়ে মারা, আগুন সন্ত্রাস, এটি কোনোদিন হতে পারে না। তিনি বলেন, সব কিছুর জন্য দেশে শান্তি এবং শৃঙ্খলা লাগবে। আওয়ামী লীগ সরকার এ স্থিতিশীলতা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আইনের আওতায় যা যা করা দরকার সব কিছুই করার নির্দেশ দিবে। তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে এসব মোকাবেলা করবেন। তারা দিন-দুপুরে খালেদা জিয়ার কোর্টে যাওয়াকে কেন্দ্র করে গাড়ি পোড়াবে, সেটি চোখ বুজে কেউ দেখবেন না।
কোন্দল নিরসনের বিষয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্ণেল (অব.) ফারুক খান বলেন, অতীতে তারা কিছুটা ছাড় দিয়েছেন। তবে আগামী নির্বাচনে জয়ের স্বার্থে কঠোরতা অবলম্বন করা হবে। নেতাদের ব্যক্তিগত রেষারেষির কারণে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেয়া হবে না।সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে কঠোরতার নির্দেশনা দিয়েছেন দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা। তারা তার নির্দেশনা মতো দলের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন এবং বিশৃঙ্খল কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।