কেস ডায়রি: পর্ব-১

অ্যাড. তুহিন আহমেদ
রহিম মিয়া, বয়স ৬৫ বছর, আদালতে এসেছেন ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করতে। ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ছেলে বাঁশের লাঠি দিয়ে তাকে মারধর করেছে। ছেলে কেন পিতাকে মারধর করলো? পিতা কাঁদতে কাঁদতে আদালতে দাঁড়িয়ে বললেন- নেশার টাকা দিতে না চাওয়ায়, আমাকে বেধড়ক পেটালো, ওর মা আমাকে ঠেকাতে আসলে তাকেও পেটালো। বিজ্ঞ আদালত রহিম মিয়ার অভিযোগ আমলে নিয়ে ছেলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরওয়ানার (ওয়ারেন্ট) আদেশ দিলেন। অন্যদিকে, সুমন বিশ্বাস এবং তার স্ত্রী বিজ্ঞ আদালতে এসেছেন ছেলের জামিনে বাধা দিতে। আসামীপক্ষের বিজ্ঞ অ্যাডভোকেট তার ছেলের জামিন প্রার্থনা করে বিজ্ঞ আদালতে শুনানী করলেন। আদালতের অনুমতি নিয়ে সুমন বিশ্বাস আদালতকে বললেন, তার ছেলের জামিনে তাদের ঘোর আপত্তি আছে। তিনি বললেন, আমার ছেলে এমন কোনো খারাপ কাজ নেই, যা সে করে না। সে নিয়মিত নেশা করে, নেশার টাকার জন্য ওর মা আর আমাকে মারধর করে, বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। সুমন বিশ্বাসের স্ত্রী বললেন, স্যার, ওকে জামিন দিবেন না, ও জেলে থাকলে আমরা শান্তিতে থাকবো। বিজ্ঞ আদালত ছেলের জামিন নামঞ্জুর করলেন।
এদিকে বৃদ্ধা ছকিনা বেগম আদালতে এসেছেন ছেলের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা উঠিয়ে নিতে। তিনি ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে আদালতকে বললেন, স্যার, আমার ছেলে জেলখানা হতে আমার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে ও আমাকে আর মারধর করবে না, আর কখনো নেশা করবে না, ও ভালো হয়ে যাবে, আমার ছেলেকে মুক্তি দিন। বিজ্ঞ আদালত মামলা প্রত্যাহারের প্রার্থনা মঞ্জুর করে ছেলেকে মুক্তির আদেশ দিলেন। রহিম মিয়া, সুমন বিশ্বাস, ছকিনা বেগমদের মতো অনেকেই আছেন, যারা হয়তো লোক লজ্জায় আদালতে না এসে নীরবে নিভৃতে মানসিক যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছেন। কিন্তু কেন? কেন আমাদের সন্তানদের এই নৈতিক অবক্ষয়, কেন তাদের মনুষ্যত্ববোধ লোপ পাচ্ছে, কেন আজ ছেলে পিতা-মাতাকে মারধর করছে, কেন আজ ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করে ছেলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পিতা-মাতাকে বলতে হচ্ছে জামিনে আপত্তি আছে, কেন আজ প্রিয় ছেলেকে জেলহাজতে আটকে রাখতে পিতা-মাতা নিরাপদ বোধ করছেন? সব উত্তর আমাদের সবারই জানা। তাই আসুন, আমাদের সন্তানদের চোখে চোখে রাখি, তারা কাদের সঙ্গে মিশছে সেটা খেয়াল করি, তাদের নৈতিক শিক্ষা দিই এবং নেশার কুফল সম্পর্কে সতর্ক করি। আসুন, আপনি, আমি, আমরা সবাই সচেতন হই, সোচ্চার হই, দায়িত্বশীল হই সুন্দর আগামীর জন্য (উল্লেখ্য উপরোক্ত নামগুলো ছদ্মনাম হিসেবে ব্যবহৃত)।