বিএডিসি কন্ট্রাক্টগ্রোয়ার্স চুয়াডাঙ্গা জোনে বোরোধান আবাদ নিয়ে বিরাজ করছে অস্থিরতা

সন্ধ্যায় বীজ দেয়া শুরু : দুজনের নামে ২৩৮ বস্তা বীজের ছাড়পত্র দেখে উত্তেজনা
স্টাফ রিপোর্টার: বিএডিসির কন্ট্রাক্টগ্রোয়ার্স চুয়াডাঙ্গা জোনের চাষিদের মধ্যে বোরোধান বীজ বিতরণ শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সারাদিন কৃষকদের অনেকে অপেক্ষা করলেও সন্ধ্যায় কন্ট্রাক্টগ্রোয়ার্সের ৫ জন ও অধিক বীজের একজন চাষিকে বীজ দেয়া হয়। এ সময় সদর থানার ওসিসহ একদল পুলিশ অফিসার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত পেয়ে থানায় ফিরতে না ফিরতে উত্তেজনা চরমে রূপ নিয়েছে বলে প্রাপ্ত খবরে পুলিশকে ফিরতে হয় বিএডিসির দৌলাতদিয়াড়স্থ কন্ট্রাক্টগ্রোয়ার্স অফিস প্রাঙ্গণে। কৃষক প্রতি সর্বোচ্চ ২০ বস্তার বেশি বীজ দেয়া যাবে না মর্মে প্রাথমিকভাবে জানানো হলেও জীবননগর ব্লকের চাষি এনামুল ও মো. সালাউদ্দিন নামের দুজনের জন্য মোট ২শ ৩৮ বস্তা বীজ দেয়ার জন্য কন্ট্রাক্টগ্রোয়ার্সের উপ-পরিচালক স্বাক্ষরিত ছাড়পত্র পেয়ে চমকে ওঠেন অনেকে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলে বলেন, এতোকিছুর মধ্যেও অনিয়ম?
পুলিশ বলেছে, ওই ছাড়পত্রসহ বাবলু হোসেন নামের একজনকে যখন মাফিজুর রহমান মাফিসহ কয়েকজন আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তখন উত্তেজনা দেখা দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছে, চাষি সেজে সুবিধা নেয়া দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌছুলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। বাবুল হোসেন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি মো. সালাউদ্দিন মিয়ার ম্যানেজার। তিনিই তাকে ওই ছাড়পত্র দিয়ে বীজ নেয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। পরে পুলিশ তাকে থানায় নেয়। অপরদিকে স্থানীয়দের অনেকেই বলেছেন, পরিস্থিতি এখনও শান্ত হয়নি। চলমান অস্থিরতার স্থায়ী সমাধান না হলে বড় ধরণের সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। যে বীজ ১০ নভেম্বরের মধ্যেই বিএডিসির কন্ট্রাক্টগ্রোয়ার্স চুয়াডাঙ্গা জোনের চাষিদের মধ্যে সরবরাহ করার কথা, কৃষক সেজে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার দাবি নিয়ে হাজির হওয়ার নেতা ও নেতার লোকজনদের অব্যাহত চাপের মুখে কর্মকর্তারা থমকে থাকেন। বোরোধান বীজতলায় বোনার সময় পাওয়ার উপক্রম হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। গত কয়েকদিন ধরে এ নিয়ে বিএডিসি তথা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের চুক্তিভিত্তিক আবাদের চাষিদের তালিকাভুক্ত নিয়ে উত্তেজনা চলে আসছে। উত্তেজনার এক পর্যায়ে চাষিদের তরফে কমিটি গঠন করে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। ১৩ জনের নাম লিখে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে দাবি তোলা হলেও ওই কমিটিভুক্তদের মধ্যে রয়েছে অকৃষক বলে জানিয়ে তা বাতিলেরও দাবি ওঠে। এক পর্যায়ে গতপরশু কন্ট্রাক্টগ্রোয়ার্স চুয়াডাঙ্গা জোনের উপ-পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম কয়েকজন সহকর্মী নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনি গড়ে তুলে ৩ ডিসেম্বর থেকে প্রকৃত চাষিদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে নির্ধারিত মূল্যে বোরোধান বীজ বিতরণ করার সিদ্ধান্তের কথা জানান সংশ্লিষ্টকর্মকর্তা। যা গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গায় বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরা হয়। এর মাঝে গতকাল সকাল থেকেই কৃষকদের পক্ষে বেশকিছু ব্যক্তি আবাদের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি তুলে দ্রুত বীজ সরবাহের জন্য পুনঃ পুনঃ অনুরোধ জানানো হয়। তাতে তেমন সাড়া না দিলেও সন্ধ্যায় শুরু হয় বীজ বিতরণ। তাও আবার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে নয়। বীজ বিতরণের খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর তোজাম্মেল হোসেন, ওসি অপারেশন ইন্সপেক্টর আমির আব্বাস ও এসআই খালিদ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তখন পরিস্থিতি শান্তই ছিলো। পুলিশ ফেরার পর পরই মাফিজুর রহমান মাফি নামের একজন কয়েকজনকে সাথে নিয়ে বাবুল হোসেন নামের একজনকে খুঁজতে শুরু করেন। তাকে সামনে পেয়ে বীজ নিয়েছে কিনা জানতে গেলে হাতে থাকা উপ-সহকারী পরিচালক (কন্ট্রাক্টগ্রোয়ার্স)’র স্বাক্ষরিত ছাড়পত্রে এনামুল হকের মোট ১৭০ বস্তা ও মো. সালাউদ্দীনের ৬৮ বস্তা বীজের কথা লেখা দেখে বলেন, ধরা পড়েছে দুর্নীতি। বাবুল হোসেনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মো. সালাউদ্দিনের ম্যানেজার বলে পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনিই আমাকে বীজ নেয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। বাবলু হোসেনকে নিয়ে উত্তেজনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে বাবুলকে থানায় নেয়।
প্রসঙ্গত: চুয়াডাঙ্গা জোনে এবার মোট ৮ হাজার ২শ ২০ একর জমিতে বোরোধানের আবাদের জন্য কৃষকদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার অনুমোদন মেলে। প্রকৃত কৃষকের বদলে গুটি কয়েক ব্যক্তি নিজেদের কৃষক সেজে সুবিধা নেয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই অনেকের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছিলো। কিছুদিন ধরেই ভাগিদার নেতার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দীর্ঘদিনের নানা অনিয়ম প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক শক্ত হাতে অনিয়ম রোধের নির্দশনা দিয়ে সকল প্রকারের সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি স্কিমের তালিকাসহ স্কিম লিডারের নাম ধাম চেয়েছেন।