ঝিনাইদহ মোবারকগঞ্জ চিনিকলে ১২ কোটি টাকার চিনি অবিক্রিত ও ৩শ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে আখ মাড়াই মরসুম শুরু

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ মোবারকগঞ্জ চিনিকলে ১২ কোটি টাকার চিনি অবিক্রিত ও মোচিক ৩শ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা নিয়ে ২০১৭-১৮ আখ মাড়াই মরসুম শুরু করতে যাচ্ছে। এটি সুগার মিলের ৫১তম আখ মাড়াই মরসুম। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ এ ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠানটি পুঞ্জিভূত ঋণসহ প্রায় ৩শ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে আজ শুক্রবার মাড়াই মরসুমের উদ্বোধন করবে। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ আখ মাড়াই মরসুমে প্রায় ৩৭ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয় মিলটির। এবার ৯৫ দিনে এক লাখ দশ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৭ হাজার ৭০০ টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এদিকে মিলটির গুদামে অবিক্রিত রয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকার চিনি। শ্রমিকদের দুই মাসের বকেয়া রয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা। এছাড়াও অবসরে যাওয়া শ্রমিকদের গ্রাইচ্যুটি প্রায় ১৫ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।
মোবারকগঞ্জ সুগারমিল সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর ৫০টি আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন মরসুম পার করেছে এটি। ২০১৭-১৮ আখ মাড়াই মরসুম হবে ৫১তম মাড়াই মরসুম। গত ৫০টি আখ মাড়াই মরসুমে সুগার মিলটি লাভের মুখ দেখে মাত্র ১৬টি মরসুমে। যার অঙ্ক ছিলো মাত্র ৩৮ কোটি টাকা। আর ৩৪টি আখ মাড়াই মরসুমে পুঞ্জিভূত ঋণসহ প্রায় ৩০১ কোটি টাকা দেনা রয়েছে মিলটির। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোবারকগঞ্জ সুগার মিল এলাকায় আখ চাষ দিন দিন কমে যাচ্ছে। গত ২০১০-১১ অর্থ বছরে ১২ হাজার একর জমিতে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু অর্জন মাত্র ৭ হাজার ৪৫৪ একর। ২০১১-১২ মরসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১২ হাজার একর অর্জিত হয় ৭ হাজার ৮শ একর। ২০১২-১৩ মরসুমে ১১ হাজার একর লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে অর্জিত হয় ৮ হাজার ৫০০ একর। ২০১৩-১৪ মরসুমে ১১ হাজার একরের মধ্যে মাত্র ৩ হাজার ৩২৬ একর, ২০১৪-২০১৫ মরসুমে ১০ হাজার একরের মধ্যে মাত্র ৪ হাজার ৮৮৩ একর এবং ২০১৫-২০১৬ মরসুমে ১০ হাজার ৫০০ একরের মধ্যে ৪ হাজার ৯৪১ একর আখ রোপণ হয়। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ মরসুমে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৯ হাজার একর। কিন্তু মিল এলাকার কৃষকরা ৬ হাজার ৮০ একর জমিতে আখ রোপণ করে। গত ৭ মাড়াই মরসুমের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কোনো মরসুমেই আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। মিল এলাকা দিন দিন কেনো আখ রোপণ থেকে সরে আসছে এমন প্রশ্নে কৃষকরা আখের মূল্য কম ও টাকা পরিশোধে গড়িমসির কথা বলেন। ঠিকমতো পুঁজি না পাওয়া এবং মাথাভারী প্রশাসনকে দায়ী করেন। মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন জানান, তারা প্রতিদিনই আখ চাষের জন্য কৃষকদের সাথে বৈঠক করছেন। তাদের পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের ইক্ষু বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আখ চাষ করতে উদ্বুদ্ধ করছেন। ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের বলিদাপাড়ায় ১৯৬৫ সালে ৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৮৯.৮১ একর নিজস্ব সম্পত্তির ওপর নেদারল্যান্ড পদ্ধতিতে সরকার মোবারকগঞ্জ চিনিকলটি স্থাপন করে। এর মধ্যে ২০.৬২ একর জমিতে কারখানা, ৩৬.২২ একর জমিতে স্টাফদের জন্য আবাসিক কলোনি, ২৩.৯৮ একর জমিতে পুকুর ও প্রায় ১০০ একর জমিতে পরীক্ষামূলক ইক্ষু খামার রয়েছে।