শাজনীন হত্যায় শহীদুলের ফাঁসি কার্যকর

স্টাফ রিপোর্টার: বহুল আলোচিত শাজনীন তাসনিম রহমানকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শহীদুল ইসলাম শহীদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। রায় কার্যকরের পর কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. মিজানুর রহমান কারাফটকে এসে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ফাঁসি কার্যকরের পর সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে তার ভাই মহিদুল ইসলাম লাশ গ্রহণ করেন। রাতেই তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মোকসেদপুর থানার ডাংগাদুর্গাপুর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়।

কারাসূত্র জানায়, ফাঁসির রায় কার্যকরের সময় গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাহেনুল ইসলাম, কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ মো. মঞ্জুরুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেল শেখ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বুধবার দুপুরে শহীদের বাবা সিদ্দিক মোল্লা, মা, ভাই, বোন কারাগারে তার সাথে শেষ দেখা করেন। সাক্ষাৎকালে শহীদ স্বাভাবিক থাকলেও তার বাবা-মা ও ভাই-বোন কান্নায় ভেঙে পড়েন। এক পর্যায়ে শহীদও আবেগে আপ্লুত হয়ে যান। পরে অশ্রুসজল চোখে পরিবারের সদস্যরা কারাগার ত্যাগ করেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল রাতে ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের মেয়ে শাজনীন তাসনিম রহমান গুলশানে নিজ বাড়িতে খুন হন। ২০০৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত রায় ঘোষণা করেন। রায়ে শাজনীনকে ধর্ষণ ও খুনের পরিকল্পনা এবং সহযোগিতার দায়ে ৬ আসামিকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১৮ বছর পর গত বছরের ২৯ মার্চ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের বেঞ্চে হাইকোর্টে ফাঁসির আদেশ পাওয়া আসামিদের আপিলের শুনানি শুরু হয়। তিন সদস্যের ওই বেঞ্চের অপর দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

অপর চার আসামি হলেন, ঠিকাদার হাসানের সহকারী বাদল, গৃহপরিচারিকা দুই বোন এস্তেমা খাতুন (মিনু) ও তার বোন পারভীন এবং কাঠমিস্ত্রি শনিরাম মণ্ডল। পরে ওই বছর আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এরপর মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল করেন। ২০০৬ সালের ১০ জুলাই ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের ওপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর এক আসামি শনিরাম মন্ডলকে খালাস দেন। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ২৬ এপ্রিল আপিল বিভাগ চার আসামি হাসান, বাদল, মিনু ও পারভীনের করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করেন। পরে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অপর আসামি শহীদুল জেল আপিল করেন। সাত বছর পর ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ ওই আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। গত বছরের ২ আগস্ট আপিল বিভাগ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া পাঁচ আসামির মধ্যে শহীদের সাজা বহাল রেখে অপর চারজনকে খালাস দেয়া হয়। পরে শহীদ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য আপিল বিভাগে আবেদন করেন। চলতি বছরের ৫ মার্চ প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ রবিবার শুনানি শেষে রিভিউ আবেদন খারিজ করেন।