পুলিশের ভাবমূর্তি রক্ষায় পুলিশেরই আন্তরিক হওয়া দরকার

তারপরও আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় নিরাপত্তা প্রশ্নে পুলিশই ভরসা। পুলিশের সকল সদস্য ছিনতাইকারী নন, কেউ কেউ সুযোগ বুঝে টাকা কিংবা মূল্যবান মালামাল ছিনিয়ে অথবা হাতিয়ে নিয়ে পুরো পুলিশবাহিনীর ভাবমূর্তিতে কলঙ্ক লেপন করে, করছে। যা শুধু পুলিশে কর্মরতদেরই খাটো করে না, সমাজকেও ঠেলে দেয় বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচালে। ফলে পুলিশের সদস্য তথা আইনের রক্ষক হয়ে যে বা যারা অপরাধ করে তার বা তাদের শাস্তি সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি এবং তড়িৎ হওয়া প্রয়োজন। যদি পুলিশ পুলিশ সদস্যের অপরাধ আড়ালে স্বজনপোষণের দিকে পা বাড়ায় তা হলে পুলিশের ভাবমূর্তি তলানিতে পড়তে বাধ্য।
পুলিশের ভাবমূর্তি পুনঃউদ্ধারে যখন পদে পদে তাগিদ, আস্থা অর্জনে যখন পুলিশিং কমিটি গঠনসহ নানামুখি উদ্যোগ তখন পুলিশেরই এক বা একাধিক সদস্য পরিকল্পিতভাব ব্যবসায়ীকে বাস থেকে নামিয়ে তার নিকট থেকে নগদ ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনাটিকে কি কোনোভাবেই খাটো করে দেখা যায়? চুয়াডাঙ্গার একজন ব্যবসায়ী ট্রাক কেনার জন্য জীবননগরের উদ্দেশে নগদ টাকা নিয়ে রওনা হয়ে ঝিনাইদহ মহেশপুরের দত্তনগর ফাঁড়ি পুলিশের একজন এএসআইসহ দু’কনস্টেবলের কবলে পড়েন। গতকাল পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি টাকা ফেরতেরও বর্ণনা উঠে এসেছে। পুলিশের অভিযুক্ত এএসআই ও দু’কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, প্রত্যাহারের পর তিনজনকেই ক্লোজ করে ঝিনাইদহ পুলিশ লাইনে রেখে শুরু হয়েছে বিভাগীয় তদন্ত। পুলিশেরই এক পদস্থ কর্মকর্তাকে তদন্ত কমিটির প্রধান করে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশের সদস্য যখন ছিনতাইয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত তখন পুলিশের পাশাপাশি কি বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিৎ নয়? যদিও কোনটি উচিৎ কোনটি অনুচিত তা নিয়ে বিতর্কের চেয়ে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচন করে সত্যিকারের দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করাটাই আসল। তা না করতে পারলে প্রবণতা পেয়ে বসবে। সমাজটাই যাবে রসাতলে।
একজন ব্যবসায়ী কেন অতোগুলো টাকা নগদ বহন করছিলেন? ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা যখন সহজলভ্য তখনও তা গ্রহণ না করার আড়ালে অন্যকিছু লুকিয়ে আছে কিনা তা খুটিয়ে দেখার দাবি রাখে। পুলিশের একজন এএসআই দুজন কনস্টেবলকে সাথে নিয়ে ব্যবসায়ীর টাকা ছিনিয়ে নেয়ার সাহসই বা পেলেন কীভাবে? তবে কি এদেরও আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা রয়েছে? নাকি টাকা ছিনিয়ে নিয়ে কারো কারো পারপাওয়ার কারণে নীতি নৈতিকতার এতোটা স্খলন? যার কাজ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তিনিই যখন ছিনতাইকারী তখন ন্যূনতম ছাড় পাওয়ার অবকাশ রাখে কি? অবশ্যই দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।