এমন নিষ্ঠুর জঘন্য হামলা কেন?

জুমার নামাজের সময় মিসরের সিনাইয়ে অবস্থিত বিখ্যাত রাওদা মসজিদে বোমা ও বন্দুক নিয়ে হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা ২৩৫ জন মুসল্লিকে হত্যা করেছে। এ হামলায় আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। রক্তে রঞ্জিত হয়ে আছে পুরো এলাকা। ৪টি গাড়িতে করে এসে জঙ্গিরা প্রথমে মসজিদটি ঘিরে ফেলে। এরপর একের পর এক বোমা ফাটায়। আতঙ্কিত মুসল্লিরা প্রাণভয়ে চিৎকার করতে করতে মসজিদের বাইরে বেরিয়ে এলে জঙ্গিরা তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। গুলি মসজিদের ভেতরেও চালানো হয়। ভাবা যায় কতোটা পৈশাচিক, কতোটা নিষ্ঠুর এ হামলা! এ হামলার পর গোটা মিসর যেন শোকে পাথর হয়ে গেছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ৩দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীসহ অনেক বিশ্বনেতা বর্বরতম এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।
মিসরে শুক্রবারের হামলাটি ছিলো স্মরণকালের ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মান্তিক, প্রাণঘাতী ও হৃদয়বিদারক। এ হামলায় হতাহতদের প্রায় সবাই সুন্নি মুসলমান। অনেকে আবার সুফিবাদের অনুসারী ছিলেন বলে জানা গেছে। তার চেয়েও বড় কথা, সবাই ধর্মপ্রাণ ও নিরীহ মুসলমান। তাদের ওপর এমন বর্বরোচিত হামলা কেন? তবে কোনো গোষ্ঠী এ হামলার দায় স্বীকার করেনি। নিরাপত্তা বাহিনীর ধারণা, ইসলামিক স্টেট বা আইএস সংশ্লিষ্ট ‘সিনাই প্রভিন্স’ নামের স্থানীয় একটি গ্রুপ এ হামলা চালিয়ে থাকতে পারে। আল-কায়েদাও এলাকাটিতে যথেষ্ট সক্রিয়, সন্দেহের তালিকায় তারাও রয়েছে। এই গ্রুপগুলো আগেও এ ধরনের অনেক হামলা চালিয়েছে। ২০১৫ সালে এ সিনাই প্রভিন্স রাশিয়ার একটি বিমানে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ২২৪ জন নিরীহ পর্যটককে হত্যা করে। দেশটিতে থাকা কপটিক খ্রিস্টানদের ওপর এরা কয়েক ডজন বোমা হামলা চালিয়ে শ শ মানুষকে হত্যা করেছে। সেনা-পুলিশ কনভয়সহ যানবাহনে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। একই ধরনের হামলা করা হচ্ছে ইরাক, সৌদি আরব, নাইজেরিয়া, সোমালিয়াসহ অনেক মুসলিম দেশেই। বাদ যাচ্ছে না অমুসলিম দেশও। ইসলামের নাম নিয়ে এমন নিষ্ঠুর ও জঘন্য হামলা কেন? নিরীহ মানুষ হত্যা করে ইসলাম ধর্মকেই কি অপবিত্র করা হচ্ছে না? ইসলামের প্রতি অমুসলিমদের মধ্যে বিদ্বেষ সৃষ্টি করা হচ্ছে না? এ জঙ্গিদের উদ্দেশ্য কী? মুসলমানদের এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতেই হবে। বাংলাদেশেও ইসলামের নামে জঙ্গিবাদকে উসেক দেয়ার চেষ্টা অনেক দিন ধরেই চলছে। এর পেছনেও স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উস্কানি রয়েছে। তাই বাংলাদেশের মুসলমানদেরও এদের উস্কানি সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। বুঝতে হবে নিষ্ঠুরতা কখনো ইসলামের অপকার ছাড়া উপকার করবে না।