পাকিস্তানের ইসলামাবাদ রণক্ষেত্র

অবস্থান কর্মসূচি থেকে ইসলামপন্থীদের উৎখাত

মাথাভাঙ্গা মনিটর: কট্টর ইসলামপন্থীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ গতকাল শনিবার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় অন্তত দুজন নিহত ও দু’শতাধিক লোক আহত হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে দেড় শতাধিক বিক্ষোভকারীকে।

নিরাপত্তা বাহিনী রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ইসলামপন্থীদের একটি অবস্থান কর্মসূচি ছত্রভঙ্গ করে দিতে গেলে এ সংঘাত হয়। তাদের দুই সপ্তাহের অবস্থান ধর্মঘটে ইসলামাবাদে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভকারীরা ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে দেশটির আইনমন্ত্রী জাহিদ হামিদের পদত্যাগ দাবি করে আসছেন। গতকাল শনিবার সকাল থেকে অভিযান শুরু হয় এবং সন্ধ্যার আগে তা স্থগিত করা হয়। প্রথমে হাজার খানের বিক্ষোভকারীকে সরাতে অভিযান শুরু হলেও পরে আরও কয়েক হাজার লোক বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়। করাচি ও লাহোরসহ অন্যান্য শহরেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এতে সারা দেশ কার্যত অচল হয়ে যায়। বেশ কয়েকটি ইসলামী সংগঠন দেশজুড়ে বিক্ষোভ করে। তারা অবস্থানরত বিক্ষোভকারীদের দাবির প্রতি সংহতি জানায়। বিক্ষোভকারীরা আইনমন্ত্রীর বাসায় হামলা চালায়। সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া  প্রধানমন্ত্রী শহীদ খাকান আব্বাসিকে শান্তিপূর্ণভাবে সঙ্কট সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন। এদিন বন্ধ রাখা হয় দেশটির বেসরকারি টিভি চ্যানেল। ব্লক করে দেয়া হয় ফেসবুক ও ইউটিউব।

বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল শনিবার সকালের মধ্যে বিক্ষোভকারীদের চলে যেতে নির্দেশ দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। তারা তাতে অস্বীকৃতি জানালে সকাল থেকে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তাকর্মীরা রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। বিক্ষোভকারীদের উৎখাতে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর আট হাজার ৫০০ সদস্য মোতায়েন করা হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সকালে বন্ধ মার্কেটের সামনে ও রাস্তার ওপর অবস্থান নেয়া বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে অভিযান শুরু করে।

‘তেহরিক-ই-লাবাইক ইয়া রাসূল আল্লাহ পাকিস্তান’ নামের সংগঠনটি এ অবস্থান ধর্মঘটের ডাক দেয়। তারা ৬ নভেম্বর থেকে ইসলামাবাদের একটি প্রধান সড়ক বন্ধ করে রাখে। এতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। হাজার হাজার নগরবাসী গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে। অবরোধের কারণে তাদের বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। এতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আইনমন্ত্রী জাহিদ হামিদ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথে ইসলামবিরোধী বাক্য জুড়ে দিয়েছেন বলে দাবি করে তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছে লাবায়েক।

সরকার নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা যায়, আকাশে ধোঁয়া উড়ছে আর রাস্তায় আগুন জ্বলছে। ভারি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অগ্রসর হন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। মুখোশ পরা বিক্ষোভকারী নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দিকে ইটের সুরকি নিক্ষেপ করে। তেহরিক-ই-লাবায়েক দলের মুখপাত্র ইজাজ আশরাফি বলেন, ‘আমরা সংখ্যায় হাজার হাজার। আমরা স্থান ছাড়বো না। শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাব।’ এর আগে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট বিক্ষোভকারীদের বিক্ষোভ শেষ করার পরামর্শ দিয়েছিলো। কিন্তু তারা তাতে সাড়া না দেয়ায় রাজধানী কর্তৃপক্ষকে যে কোনো উপায়ে শনিবারের মধ্যে বিক্ষোভকারীদের উচ্ছেদের নির্দেশ দেয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহসান ইকবাল আদালতকে অনুরোধ করেন যাতে উচ্ছেদের সময় বাড়ানো হয় এবং বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা করা যায়। কিন্তু কয়েক দফা সময় বাড়ানো হলেও তাতে কোনো ফল আসেনি। এরপর আদালত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে হুঁশিয়ার করে দেন যে, তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হতে পারে।

বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। ঘটনাস্থলে কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স দেখা গেছে। পাকিস্তানের করাচি ও লাহোরেও বিক্ষোভ চলছে বলে জানা গেছে। পাকিস্তানে আগামী বছর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটি বেশ সংঘাতময় হবে বলে মনে করা হচ্ছে। নির্বাচনের আগে শক্তি সঞ্চারের চেষ্টা করছে ইসলামপন্থী দলগুলো।