ননক্যাডারদের সমমান ঠেকাতে ধর্মঘটে ক্যাডার শিক্ষকরা

স্টাফ রিপোর্টার: সাম্প্রতিক সময়ে সরকারিকরণকৃত উপজেলা পর্যায়ের ২৮৫টি কলেজের শিক্ষকরা যাতে ক্যাডার মর্যাদা না পান সেই দাবিতে আজ রোববার ও আগামীকাল সোমবার কর্মবিরতি পালন করছেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত কলেজ শিক্ষকরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ ও আগামীকালের সব পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা পরীক্ষা পেছানোর জন্য ‘অনিবার্য কারণ’ এর কথা উল্লেখ করেছে। বলা হয়েছে স্থগিত হওয়া এ পরীক্ষার তারিখ পরবর্তী সময়ে জানানো হবে। আজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স (পার্ট-৩) বিশেষ, ডিগ্রি (পাস) কোর্সের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। এ পরীক্ষায় অংশ নিতো আড়াই লাখের বেশি শিক্ষার্থী। এছাড়া কাল ডিগ্রি (পাস), বিবিএ শ্রেণির পরীক্ষা রয়েছে। এখানেও প্রায় সমানসংখ্যক পরীক্ষার্থীর অংশ নেয়ার কথা। একই কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  অধীভুক্ত সাতটি কলেজেও আজ ও আগামীকালের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

বিসিএস’র মাধ্যমে নিয়োগ পাননি এই রকম শিক্ষকদের ক্যাডার মর্যাদা দেয়া হলে তা যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে গত ২৪ নভেম্বর এই কর্মবিরতি পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলো ক্যাডারভুক্ত শিক্ষকদের সংগঠন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি। নিয়োগ বিধিমালা না করে নতুন করে কলেজ জাতীয়করণ করা হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন তারা। তাদের এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কলেজে শিক্ষা ব্যবস্থা বড় ধরনের অস্থিরতা ও সঙ্কটে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অনেকেই বলছেন, হঠাৎ করে এভাবে আন্দোলন ও পরীক্ষা স্থগিতের ঘটনায় ভোগান্তিতে পড়তে হবে কয়েক লাখ পরীক্ষার্থীকে। এছাড়া এ সময় অন্যান্য শ্রেণির ক্লাসও বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বিপাকে পড়তে হবে।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ক্যাডারভুক্ত শিক্ষকদের ধর্মঘটে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি মনে করেন, এ আন্দোলন অযৌক্তিক, অপ্রয়োজনীয়। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত আইন, বিধিমালা তৈরি করছে। বিয়ষটি তাদের (ক্যাডারভুক্ত শিক্ষকদের) অবহিত করেছি। ধর্মঘট দিয়ে লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে ভোগান্তিতে ফেলা হচ্ছে। নতুন করে এ পরীক্ষার তারিখ আবার ঘোষণা করতে হবে। আমি তাদের আন্দোলন প্রত্যাহারের জন্য বলেছি। মন্ত্রী বলেন, এসব শিক্ষকদের মনে রাখা দরকার তারা সরকারি চাকরি করেন।

এদিকে অবিলম্বে তাদের দাবি মানা না হলে আগামী ৬, ৭ ও ৮ জানুয়ারি একইভাবে কর্মবিরতি পালন করবেন ক্যাডারভুক্ত শিক্ষককরা। ওই সময়ও পরীক্ষা স্থগিত করা হতে পারে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে।

দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করতে গত শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেশের বিভিন্ন কলেজ থেকে শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের নিয়ে সমাবেশ করেছিলো বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি। সমাবেশে কৃষি ক্যাডারসহ কয়েকটি ক্যাডার সদস্যদের প্রতিনিধি এসে আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে। ‘নো বিসিএস নো ক্যাডার’-এটাই তাদের প্রধান দাবি। পাশাপাশি নতুন জাতীয়কৃত শিক্ষকদের জন্য নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতি এবং চাকরির অন্যান্য শর্তসহ নতুন বিধিমালা তৈরির দাবিও জানিয়েছেন তারা। এছাড়া কোনোভাবেই তারা যেন বর্তমান ও ভবিষ্যতে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের পারস্পরিক জ্যেষ্ঠতা, পদোন্নতি, পদায়নসহ কোনো সুযোগ সুবিধার অন্তর্ভুক্ত না হতে পারেন সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) কর্তৃক বিসিএস পরীক্ষার উত্তীর্ণ ব্যতীত কাউকে শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত করা যাবে না।

সমিতির সভাপতি আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, বিবিএস শিক্ষা সমিতির শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। তাই কোনোভাবেই জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের আমাদের ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। ওই সব শিক্ষকদের অন্য যতো সুবিধাই দেয়া হোক না কেন আমাদের আপত্তি নেই। জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকরা বড় কলেজগুলোতে বদলি হয়ে এলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

যাদের ননক্যাডার করতে এই আন্দোলন তারা বর্তমানে নীরব রয়েছেন। তাদের বক্তব্য, অতীতে জাতীয়করণ হওয়া কলেজ শিক্ষকদের ক্যাডার মর্যাদা দেয়া হলে এখন দেয়া হবে না কেন? এর ব্যত্যয় হলে আইনের আশ্রয় নেবেন তারা।

সরকারিকরণকৃত কলেজ শিক্ষক সমিতির (সকশিস) আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম বলেন, আমরা দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেছি। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বেসরকারি কলেজ শিক্ষকরা মানসম্মত শিক্ষক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলছেন। তাই ক্যাডার শিক্ষক ও বেসরকারি শিক্ষকদের আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ের ২৮৫টি বেসরকারি কলেজকে সরকারিকরনের ঘোষণা দিয়েছেন। অধিকাংশের ‘ডিড অফ গিফট’ শেষ হয়েছে। বর্তমানে দেশে সরকারি কলেজ রয়েছে ৩৩৫টি। এর মধ্যে পিএসসি’র মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষা ক্যাডার সদস্য আছেন প্রায় ১৫ হাজার। ২৮৫টি কলেজের প্রায় ১২  হাজার শিক্ষক আত্তীকৃত হবেন।